নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে রোকেয়া স্পেশালাইজড হসপিটাল নামে অনুমোদন বিহীন একটি হসপিটালের বিরুদ্ধে ভুয়া চিকিৎসক কর্তৃক চিকিৎসা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে রবিবার পৌর এলাকার হরিপুর গ্রামের বাবুল হোসেন নামে এক ভূক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযুক্ত ভুয়া চিকিৎসক ইয়াছিন আরাফাত এবং ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। সোমবার সকালে সরেজমিনে ওই কথিত হাসপাতালে গিয়ে কোন চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ দেব দাস দেব সাংবাদিকদের অনুমোদন বিহীন এ হাসপাতালটি বন্ধ, ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ও ভূক্তভোগী ওই রোগীর যথাযথ চিকিৎসার আশ্বাস দেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উত্তর পাশে নাঙ্গলকোট-লাকসাম সড়কের পাশে রোকেয়া স্পেশালাইজড হসপিটাল নামে একটি অনুমোদন বিহীন প্রাইভেট হাসপাতাল দীর্ঘদিন যাবৎ ভুয়া চিকিৎসক দ্বারা অপচিকিৎসা দিয়ে আসছে। ওই অবৈধ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোখ ধাধানো বিজ্ঞাপন ও ডাক্তারদের ভুয়া ডিগ্রী কথা শুনে চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন শত-শত রোগী।
এছাড়াও ওই ভুয়া চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ছে অনেক রোগী। গত ২ ফেব্রুয়ারী পৌর এলাকার হরিপুর গ্রামের বাবুল হোসেনের স্ত্রী খাদিজা বেগম ওই অবৈধ হাসপাতালে চর্ম রোগের চিকিৎসার জন্য গেলে ভুয়া চিকিৎসক ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান পরিচয় দানকারী ইয়াছিন আরাফাত ৫’শ টাকা ভিজিট নিয়ে রোগীকে বিভিন্ন ঔষধ লিখে দেয়, পরে রোগী খাদিজা ওই ঔষধ গুলো সেবন করলে তার পুরো শরীরে ফোসকা পড়ে গিয়ে পঁচন ধরে।
ভুয়া চিকিৎসক ইয়াছিন আরাফাতের ব্যবস্থাপত্রে দেখা যায় তার ডিগ্রী লিখা হয়েছে বিএসপিটি (ডিইউ), ডি অর্থোপেডিক্স মেডিসিন (সারিয়াক্স), পিজিটি স্পোর্টস মেডিসিন (বিকেএসপি), ড্রাই নিডেলিং (ইন্ডিয়া), সিকেটি (ইন্ডিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট ডিপার্টমেন্ট অফ পিএমআর ল্যাব এইড স্পেশালাইজড। ওই ভুয়া চিকিৎসক ও অবৈধ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে অনেক রোগীর জীবন এখন সংকটাপন্ন। ওই ভুয়া চিকিৎসককে গ্রেফতার ও হাসপাতালটি বন্ধের দাবী ভূক্তভোগীদের।
হাসপাতালের চেয়ারম্যান বলে পরিচয় দানকারী অভিযুক্ত চিকিৎসক ইয়াছিন আরাফাত বলেন, আমার ডাক্তার লিখার বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে, তাই আমি ডাক্তার লিখতেই পারি। ভুল চিকিৎসার বিষয়ে তিনি কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। হাসপাতালে রোগী ভর্তি করার বিষয়ে তিনি বলেন আমাদের হাসপাতালটি এখন প্রস্তুতি মূলক ভাবে চলছে। হাসপাতালে কোন চিকিৎসক সিজার অপারেশন করান? কোন চিকিৎসক ওই রোগীদের সিজার পরবর্তী সময়ে সেবা দিচ্ছে? এ ব্যাপারে ইয়াছিন আরাফাত কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।
নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ দেব দাশ দেব বলেন, অনুমোদন বিহীন রোকেয়া স্পেশালাইজড হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়া হবে এবং চিকিৎসক পরিচয় দানকারী ইয়াছিন আরাফাতের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ভুল চিকিৎসায় ক্ষতিগ্রস্থ ভূক্তভোগী রোগীর যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রায়হান মেহেবুব বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশ্রাফুল হককে পাঠানো হবে, তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সিভিল সার্জন ডাঃ নাছিমা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি রিপোর্ট দিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।