আরিফ গাজী :
বাবুরে সারাদিন মাছ বেইচ্চা (বিক্রি) যা পাই তাই দিয়া সংসার চালাইতে হিমশিম খাই এর মধ্যে মেয়েডারে বিয়া দিছি মাইয়ার জামাইর কোন বাড়ি ঘর নাই আমার এহানোই থাহে। কয়েক মাস আগে হুনছি নুরু ইসলামের পুলা মামুন নাকি একটা ঘর পাইছে টাকা ছাড়া। এই কথা শুইনা আমি নেছার মেম্বারের কাছে গিয়া জিগাইলে হেয় আমারে কইলো তুমি ঘর পাইবা কিছু টাকা লাগবো। আমি কইলাম কত? হেয় আমারে কইলো সবাইতো ১৫ হাজার টাকা করে দেয়, তুমি গরিব মানুষ ১০ হাজার টাকা দিলেই চলব। পরের দিনেই ৫ হাজার টাকা দিতে কইল কারণ ইনু (ইউএনও) বলে কেডা তারে দিলে আমার নাম লেখব তইলেই আমি ঘর পামু। পরে হুনি হে আরো অনেকেরেই ঘর দিবো কইয়া টাকা নিছে অহন আমি যে ১৫ হাজারের জায়গায় ১০ হাজার টাকা দিমু আমারেনি আবার ঘর না দেয়। এভাবেই টাকা দিয়ে ঘর না পাওয়ার ভয়ে দিন কাটাচ্ছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের কুড়াখাল গ্রামের মৃত আবদু খাঁনের ছেলে কবির খাঁন।
খবর নিয়ে জানা যায়, শুধু কবির খাঁনই না এর মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুদানের হতদরিদ্রদের ঘর দেয়ার নামে আরো প্রায় ১০ জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাইনুল ইসলাম নেছার।
একই ভাবে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে কুড়াখাল গ্রামের বজলু খাঁর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা, বাচ্চু মিয়া (ছাফি)র কাছ থেকে ৪ হাজার ৫ শত টাকা, মোল্লা বাড়ির সাহেরা খাতুনের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা।
এছাড়াও প্রতিবন্ধী ও গর্ব কালীন ভাতার কার্ড করে দেয়াসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রামের নিরিহ লোকদের কাছ থেকে এরই মধ্যে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই ইউপি সদস্য নেছারের বিরুদ্ধে।
আরো জানা যায়, কিছুদিন পূর্বে ৮নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি প্রায় ২’শ শতক জমি ড্রেজার দিয়ে ভরাট সহযোগীতা ও টাকার বিনিময়ে কুড়াখাল বাজার সংলগ্ন বাতেন সরকারকে তার বাড়ির সামনের ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের অতি দরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী প্রকল্পের করা রাস্তার উপর ঘর নির্মাণ করে দেন ইউপি সদস্য নেছার।
দুর্নীতি নামা
* প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুদানের হতদরিদ্রদের মাঝে ঘর দেয়ার নামে টাকা আদায়।
* বয়স্ক ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কর্ড করে দেয়ার নামে প্রায় ২০ জনের কাছ থেকে অর্থ আদায়।
* টাকার বিনিময়ে সরকারি জায়গা ড্রেজার দিয়ে ভরাটে সহযোগীতা।
* ছাগল চুরির নাটক সাজিয়ে গ্রামের যুবকদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায়।
* কৃষি জমির উপর দিয়ে রাস্তার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ।
* দুর্নীতি নিয়ে স্থানীয়রা মুখ খুলায় প্রাণনাশের হুমকি, থানায় জিডি।
কুড়াখাল গ্রামের আইয়ুব খাঁন বলেন, কিছুদিন পূর্বে মিথ্যা ছাগল চুরির নাটক সাজিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে আমার ছেলেসহ স্থানীয় কয়েকজন যুবকের কাছ থেকে নেছার মেম্বার ৫০ হাজার টাকা নিছে। পরে খরব নিয়ে শুনি পুরো ঘটনাই মেম্বারের সাজানো। তখন ভয়ে কেউ আর প্রতিবাদ করি নাই কারণ তার পরিবারে লোকজন সবাই লাঠিয়াল।
একই গ্রামের গনি মিয়া বলেন, আমার এক নিকট আত্মীয়র জমির উপর দিয়ে রাস্তা নেয়ার ভয় দেখালে আমি তাকে ২০ হাজার টাকা দেই। পরে শুনি নেছার মেম্বার আমার ওই আত্মীয়র কাছ থেকেও ভয় দেখিয়ে টাকা নিছে। শুধু আমি না পরে খবর পাই সে যেখানে রাস্তা করছে সেখানেই টাকার বিনিময়ে ইচ্ছে মতো কাজ করছে।
অভিযোগ রয়েছে এসব টাকা আত্মসাতের বিষয়ে স্থানীয় শাহিন আলীম ভূইয়ার সহযোগীতায় ভোক্তভোগী ইউসুফ খাঁন, বজলু খাঁ ও কবির খাঁন মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। তারই জের ধরে গত ৪ মার্চ বুধবার সকালে কুড়াখাল বাজারে নেছার মেম্বার প্রকাশ্যে শাহিন ভূইয়াকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় শাহিন ভূইয়া গত শনিবার বাঙ্গরা বাজার থানায় নেছার মেম্বারের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
বাঙ্গরা বাজার থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ইউপি সদস্য মাইনুল ইসলাম নেছারের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিষেক দাশ ইউপি সদস্য মাইনুল ইসলাম নেছারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করছি। যদি প্রমাণ হয়ে ওই ইউপি সদস্য আমার নাম ভাংগি টাকা নিয়েছে। তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য মাইনুল ইসলাম নেছার বলেন, আমাকে হেয় করতেই অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।