এস.এম.মনির :
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস নিস্তব্ধ ও অচল করে দিয়েছে গোটা বিশ্ব। তারই ছোবলে আজ আতঙ্কে গৃহবন্দি বাংলাদেশের মানুষ। ইট পাথরের বৃহদাকার রাস্তাগুলো আজ যানবাহন ও জনমানবশূন্য। সবকিছুই যেন প্রাণহীন। বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেয়া মরণঘাতি করোনা ভাইরাস সংক্রমনে ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন চষে বেড়াচ্ছেন লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে.এম ইয়াসির আরাফাত।
উপজেলায় বহিরাগত প্রবেশ বন্ধ করতে জেলা প্রশাসক মো: আবুল ফজল মীরের নেতৃত্বে সরকারী নিদের্শনা মেনে উপজেলাকে লকডাউন ঘোষনা করেছেন।উপজেলার গুরুত্বপূর্ন স্থানে চেকপোষ্ট বসিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছেন তিনি। লকডাউন ঘোষনার পূর্বেই বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ব্যক্তিদের যত্রতত্র জায়গায় ঘোরাফেরা না করে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেন সাথে একঘেয়েমি কাটানের জন্য বই ও ফুল উপহার দেন যা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
উপজেলার পাশ্ববর্তী পশ্চিমে বরুড়া, দক্ষিনে লাকসাম, উত্তরে সদর দক্ষিণ এবং পূর্বে চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় করোনা আক্রান্ত হলেও বহিরাগত প্রবেশে ইউএনওর কঠোর তৎপরাতায় কেউ উপজেলায় প্রবেশ করতে পারেনি। তাই এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত কেউ আক্রান্ত হননি। এছাড়া বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং হোম কোয়ারেন্টাইন আইন অমান্যকারী ব্যক্তিদের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি না করতে ব্যবসায়ীদের কঠোর নিদের্শনা প্রদান করেন তিনি।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখছেন তিনি। তারপরও আবার দেখা যায় গভীর রাতেও সরকারী বার্তা, জনসচেতনামূলক পরামর্শ প্রদান করে তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম “ফেসবুক” ওয়ালে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে উপজেলার বাগমারা বাজারকে বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এবং ভূশ্চি বাজারকে ছোট শরীফপুর কলেজের খোলা মাঠে, হরিশ্চর বাজার হরিশ্চর স্কুল ও কলেজ মাঠ, বেলঘর বাজার ও যুক্তিখোলা বাজার স্কুল মাঠে বসানোর ব্যবস্থা করেছেন তিনি। উপজেলার বিভিন্ন বাজারের দোকান পাট বন্ধ, গ্রামের চা দোকানে জনসমাগম এড়িয়ে চলা নিরোধ করে প্রশংসীয় ভূমিকা পালন করেন।
সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এফসিএ এমপি ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো: আবুল ফজল মীর এর পরামর্শ ও নির্দেশনায় ইউএনও”র উদ্যোগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার প্রতি ইউনিয়নে ১০০ জন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার যাদের ঘরে এই মুহুর্তে খাবার নেই। কিন্তু সংকোচে কাউকে বলতে পারছেন না তাদেরকে বিশেষ খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। উপজেলাবাসীর মাঝে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কখনও মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে, আবার কখনও নিজ দায়িত্বে মানুষের বাড়ির দরজায় গিয়ে গিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।
এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারি তদারককারী অফিসার এর মাধ্যমে চার ধাপে ইতোপূর্বে প্রতি ইউনিয়নে ৫০০ কেজি, ১ মে. টন, ২ মে. টন ২.৫ টন মোট ৬.০মে. টন চাল সরকারী বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে যা ৬০০ হত-দরিদ্র পরিবারকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা আ”লীগের যৌথ উদ্যোগে প্রতি ইউনিয়নে ২০০ হতদরিদ্র পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্যাকেজ প্রদান করা হয়েছে। এ হিসেবে সব মিলিয়ে প্রতি ইউনিয়নে ৮০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং করোনা পরিস্থিতি ঠিক হওয়া পর্যন্ত তা চলমান থাকবে।
লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে.এম.ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে গঠিত হটলাইনে (০১৭২৭-৭৬২০৯৩)এসএমএস এর মাধ্যমে আবেদনকারী মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার এমন প্রায় ৩৫০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্যাকেজ উপজেলার সরকারী কর্মকর্তাদের তত্তাবধানে যাচাই-বাচাই করে পরিচয় গোপন রেখে পৌছে দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন মানুষের খাদ্য সমস্যায় সহায়তা হিসেবে উপজেলাবাসীকে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত চার কিস্তিতে চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দের বিষয়ে জনগণ ও সরকারের মধ্যে যাতে কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয় সেজন্য শুদ্ধাচারের অংশ হিসেবে জনগণের নিকট সঠিক জবাবদিহিতা বজায় রাখতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা তুলে ধরছেন প্রতিনিয়ত।
লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে.এম ইয়াসির আরাফাত বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সাধারণ মানুষ খুবই আতংকিত। লালমাই উপজেলাসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ভ্যানচালক, রিক্সাচালক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ, ভিক্ষুক, অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, এই সংকটময় সময়ে লালমাই উপজেলার লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব ও থানা পুলিশ, ডা: জয়াশিস সহ স্বাস্থ্যবিভাগ উপজেলায় কর্মরত কর্মকর্তাবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিগণ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার, সচিব এবং গ্রাম পুলিশসহ সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ত্রাণের তালিকা প্রস্তুত, বিতরণ, হোম কোয়ারান্টাইন নিশ্চিতকরণ সহ সকল কাজে আমি সকলের সহযোগিতা পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, লালমাই উপজেলাবাসীকে ভালো রাখতে, নিরাপদে রাখতে আমার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত উপজেলায় কোন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়নি। তবে উপজেলাবাসী যদি আমাদের আন্তরিক সহযোগিতা না করেন তাহলে সব চেষ্টা, কাজ বৃথা হয়ে যাবে। পাশাপাশি সকল ধরণের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। সামনে পবিত্র মাহে রমজান। সেদিকেও আমাদের নজর আছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।
লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার করোনা সংক্রমণ রোধে সবাইকে বাড়িতে অবস্থান কওে এ সংকটময় মুহুর্তে সরকারের পাশাপাশি সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।