কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১১। রোববার (০৭ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব- ১১ এর সিপিসি-১ এর কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মোহাম্মদ পাশা।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মামলার ৩ নম্বর আসামি ইসমাইল হোসেন (৩৬), ৪ নম্বর সোহেল শিকদার (৪৬), ৭ নম্বর মো. শাহ আলম (৩৮)। ইসমাইলকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ও বাকি দুইজনকে ঢাকার রায়েরবাগ এবং কালশি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইসমাইলের বিরুদ্ধে দুটি হত্যাসহ তিনটি, সোহেল শিকদারের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাসহ নয়টি ও শাহ আলমের বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ ১০টি মামলা রয়েছে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, এজাহারে যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে পাঁচজন বিদেশে রয়েছেন এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি সুজন ও ২ নম্বর আসামি আরিফ নেপালে, ৫ নম্বর আসামি বাদল দুবাইতে, ৬ নম্বর আসামি শাকিল ভারতে, ৮ নম্বর আসামি অলি হাসান সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। এরা কেউ হত্যাকাণ্ডের আগে, কেউ পরে বিদেশে অবস্থান নেন। ৯ নম্বর আসামি কালা মনির আত্মগোপনে আছেন।
গ্রেপ্তার আসামিরা জানিয়েছেন তাদের মধ্যে বহুদিনের অন্তর্দ্বন্দ্ব ছিল। তবে গ্রেপ্তার কেউ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে বক্তব্য দেননি। যারা গুলি করেছেন, তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম বলা যাচ্ছে না।
সিসিটিভির ১৩টি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে র্যাব। ফুটেজে দেখা যায়, গৌরিপুর বাজা মাদরাসার গলি দিয়ে বোরকা পরিহিত তিনজন বের হচ্ছে। তাদের সামনে একটি অটোরিকশা সামনে অগ্রসর হয়। এর কিছু সময় পর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়া স্থানে ৩ নম্বর আসামি ইসমাইলকে দেখা যায়। ইসমাইল অটোরিকশায় থেকে জামালের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর লুঙ্গি ও টুপি পরিহিত একজন আরো কয়েকজনসহ জামালকে দোকানের পাশে একটি গলিতে নেন। গলিতে নেওয়ার একটু পর জামাল বেরিয়ে এসে দোকানের সামনে দুই-তিন সেকেন্ড থেমে সামনে পা বাড়াতেই বোরকা পরিহিতদের সামনে অগ্রসর হতে দেখা যায়। তারা সামনে আসতেই দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি অটোরিকশা সামনে অগ্রসর হয়ে পেছনে চলে আসে।
হত্যাকাণ্ডের আগে বোরকা পরিহিত একজনকে জাপটে ধরে জামাল। আরেকজন জামালকে লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর গুলি করে পালিয়ে যাবার সময় তাদের পেছনে কয়েকজন ধাওয়া দেয়। এসময় অস্ত্রধারীরা পেছনের দিকে পিস্তল তাক করতেই ধাওযাকারীরা পিছু হটেন। পালিয়ে যাবার সময় একজনের মুখোশ খুলে যায়। তার পিস্তল হাত থেকে পড়ে যায়। আরেকজন পিস্তল কুড়িয়ে নেন। মুখোশ খুলে গেলে অস্ত্রধারীর ছোট চুল দেখা যায়। চুল দেখা নিশ্চিত হওয়া যায় অস্ত্রধারীরা পুরুষ। এরপর কিছুটা ভিন্ন রাস্তা হয়ে তারা আগের জায়গায় ফিরে আসেন। সেখানকার একটি অস্পষ্ট ফুটেজে তাদেরকে বোরকা ছাড়া দেখা যায়। বোরকাগুলো একটি ডোবা থেকে জব্দ করে র্যাব।
প্রসঙ্গত, রোববার (৩০ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরিপুর বাজারে হত্যা করা হয় জেলার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেনকে। তিনজন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি তাকে গুলি করে হত্যা করেন। জামাল হোসেন তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। তিতাস উপজেলা বাড়ি হলেও তিনি ব্যবসা করতেন পাশের দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর বাজারে। বাজারের পাশে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। এর আগেও তিতাস উপজেলায় রাজনৈতিক ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে তিতাস এবং দাউদকান্দির গৌরিপুর বাজারে পৃথক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের ধারণা, সবগুলো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যোগসূত্র রয়েছে।