১২:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
হানিফ ফ্লাইওভারে বাস-সিএনজি সংঘর্ষ, নিহত ২ লালমাইয়ে বিয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে মারধর ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা কুমিল্লা সদর দক্ষিণের ব্যবসায়ী দুলালকেখুন্তি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা ভাড়াটিয়া সুমি কুমিল্লার বেলতলীতে পিকআপ চাপায় পথচারী নিহত বিতর্কের মুখে সংসদের নির্বাচনী এলাকা সীমানা নির্ধারণ কারিগরি কমিটি কুমিল্লা সদর দক্ষিণে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান অপরাধী যে দলেরই হোক, কোনো ছাড় নেই- ওসি মোহাম্মদ সেলিম কুমিল্লা সদর দক্ষিণে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইয়ংস্টার সোশ্যাল অর্গানাইজেশন এর সদর দক্ষিন উপজেলার কমিটি গঠন নতুন পুরাতন বুঝি না,ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে-ডা. শফিকুর রহমান

পাকা নয় পাকানো

  • তারিখ : ১১:৩১:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মে ২০২০
  • / 325

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পাকা আম। নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই আসা এই আমগুলো স্বাভাবিকভাবে পাকা নয়, পাকানো। অথচ কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। চড়া দামে বিক্রি হলেও প্রকৃত পাকা আমের কোনো স্বাদ নেই এগুলোতে। এমনকি বেশিরভাগ আমের আঁটিও শক্ত হয়নি। সে কারণে উপরে পাকা, ভেতরে কাঁচা। কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো এসব আম অতিরিক্ত মুনাফার আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাজারজাত করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে আম পাড়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া আছে। সেই অনুযায়ী বাজারে ২০ মে’র আগে আম আসার কথা নয়।

জানা গেছে, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের আমের সঙ্গে দেশীয় অপরিপক্ক কাঁচা আম কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি হচ্ছে। এসব আমের পচন ঠেকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন। ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় করতে মেশানো হচ্ছে কৃত্রিম রঙ। পাকা আমের মতো দেখতে হলেও এতে নেই পাকা আমের স্বাদ। কৃত্রিমভাবে পাকানো এ আম মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাতক্ষীরা অঞ্চল থেকে এখন বেশিরভাগ আম ঢাকায় আসছে। রাজধানীর পাইকারি ফলের আড়ত বাদামতলীর কিছু ব্যবসায়ীর পাশাপাশি কাওরান বাজার ও যাত্রাবাড়ীর কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী এই আম খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। তারা জানান, আগাম আমের ওপর সবারই বাড়তি এক ধরনের আগ্রহ আছে। তাছাড়া রোজার ভেতর বিভিন্ন ফলের চাহিদা বেশি থাকে। নতুন এ পাকা আমের চাহিদাও বেশ। এ কারণে প্রাকৃতিক নিয়মে পাকার আগেই কিছু ব্যবসায়ী রাসায়নিক দিয়ে পাকানো এ আম বাজারে নিয়ে এসেছেন।
গত রোববার দুপুরে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর বাদামতলী ফলের আড়তে অভিযান পরিচালনা করে কৃত্রিমভাবে পাকানো ২৫ মনের বেশি আম জব্দ করে। এসময় কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানোর প্রমাণ পাওয়া কয়েকজন ব্যবসায়ীকে আটক করে কারাদন্ড ও জরিমানাও করা হয়।
এ বিষয়ে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, চলমান করোনা দূর্যোগের মাঝেই বাদামতলীর ফলের আড়তে অপরিপক্ক ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আমের সন্ধান পাওয়া গেছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফার জন্য এই আম বিক্রি করছে। যেগুলো উপরে থেকে হলুদ টসটসে কিন্তু ভেতরে একেবারেই অপরিপক্ক। এসব আম ১০ থেকে ১৫ দিন গাছে থাকলেই পরিপক্ক হয়ে যেতো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাছপাকা আম উঠতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে ক্রেতার চাহিদা থাকায় অপরিপক্ক আম পাকিয়ে বিক্রি করছে অসাধু ফল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। মৌসুমের শুরুতে আকাশচুম্বী দাম পাওয়ার আশায় আম পাকাতে রাসায়নিক মেশাচ্ছে তারা।
রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে কাওরান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর ১০ নম্বর ফলপট্টি, শেওড়াপাড়া ফলবাজার, পুরানা পল্টন, হাতিরপুল, যাত্রাবাড়ীসহ সব বাজারেই এখন কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় ফলের আড়ৎ বাদামতলীতে প্রতিদিনই ট্রাক ভর্তি আম আসছে। র‌্যাবের অভিযানে আটক কয়েকজন ব্যবসায়ি দাবি করেছেন, ঢাকায় তারা কার্বাইড মেশাননি। তার মানে ঢাকার বাইরে থেকে কৃত্রিম উপায়ে আম পাকিয়ে ঢাকায় আনা হচ্ছে।
ফল পাকাতে কেমিক্যাল মেশানোর অভিযোগ পুরনো। খাদ্যবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা যায়, বিভিন্ন ফলে পর্যায়ক্রমে মেশানো হয় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, কার্বাইড ও ফরমালিনের মতো রাসায়নিক। তাই বাজার থেকে ফল কেনার আগে সাবধান হতে বলছেন পুষ্টিবিদরা। তা না হলে ক্যান্সারসহ মারাত্মক সব রোগের ঝুঁকি রয়েছে। ফলের ভরা মৌসুম শুরুর আগে ভেজাল ও কেমিক্যালরোধে কঠোর অভিযান পরিচালনার দাবি ভোক্তাদের।

শেয়ার করুন

পাকা নয় পাকানো

তারিখ : ১১:৩১:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মে ২০২০

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পাকা আম। নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই আসা এই আমগুলো স্বাভাবিকভাবে পাকা নয়, পাকানো। অথচ কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। চড়া দামে বিক্রি হলেও প্রকৃত পাকা আমের কোনো স্বাদ নেই এগুলোতে। এমনকি বেশিরভাগ আমের আঁটিও শক্ত হয়নি। সে কারণে উপরে পাকা, ভেতরে কাঁচা। কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো এসব আম অতিরিক্ত মুনাফার আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাজারজাত করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে আম পাড়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া আছে। সেই অনুযায়ী বাজারে ২০ মে’র আগে আম আসার কথা নয়।

জানা গেছে, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের আমের সঙ্গে দেশীয় অপরিপক্ক কাঁচা আম কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি হচ্ছে। এসব আমের পচন ঠেকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন। ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় করতে মেশানো হচ্ছে কৃত্রিম রঙ। পাকা আমের মতো দেখতে হলেও এতে নেই পাকা আমের স্বাদ। কৃত্রিমভাবে পাকানো এ আম মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাতক্ষীরা অঞ্চল থেকে এখন বেশিরভাগ আম ঢাকায় আসছে। রাজধানীর পাইকারি ফলের আড়ত বাদামতলীর কিছু ব্যবসায়ীর পাশাপাশি কাওরান বাজার ও যাত্রাবাড়ীর কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী এই আম খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। তারা জানান, আগাম আমের ওপর সবারই বাড়তি এক ধরনের আগ্রহ আছে। তাছাড়া রোজার ভেতর বিভিন্ন ফলের চাহিদা বেশি থাকে। নতুন এ পাকা আমের চাহিদাও বেশ। এ কারণে প্রাকৃতিক নিয়মে পাকার আগেই কিছু ব্যবসায়ী রাসায়নিক দিয়ে পাকানো এ আম বাজারে নিয়ে এসেছেন।
গত রোববার দুপুরে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর বাদামতলী ফলের আড়তে অভিযান পরিচালনা করে কৃত্রিমভাবে পাকানো ২৫ মনের বেশি আম জব্দ করে। এসময় কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানোর প্রমাণ পাওয়া কয়েকজন ব্যবসায়ীকে আটক করে কারাদন্ড ও জরিমানাও করা হয়।
এ বিষয়ে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, চলমান করোনা দূর্যোগের মাঝেই বাদামতলীর ফলের আড়তে অপরিপক্ক ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আমের সন্ধান পাওয়া গেছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফার জন্য এই আম বিক্রি করছে। যেগুলো উপরে থেকে হলুদ টসটসে কিন্তু ভেতরে একেবারেই অপরিপক্ক। এসব আম ১০ থেকে ১৫ দিন গাছে থাকলেই পরিপক্ক হয়ে যেতো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাছপাকা আম উঠতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে ক্রেতার চাহিদা থাকায় অপরিপক্ক আম পাকিয়ে বিক্রি করছে অসাধু ফল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। মৌসুমের শুরুতে আকাশচুম্বী দাম পাওয়ার আশায় আম পাকাতে রাসায়নিক মেশাচ্ছে তারা।
রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে কাওরান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর ১০ নম্বর ফলপট্টি, শেওড়াপাড়া ফলবাজার, পুরানা পল্টন, হাতিরপুল, যাত্রাবাড়ীসহ সব বাজারেই এখন কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় ফলের আড়ৎ বাদামতলীতে প্রতিদিনই ট্রাক ভর্তি আম আসছে। র‌্যাবের অভিযানে আটক কয়েকজন ব্যবসায়ি দাবি করেছেন, ঢাকায় তারা কার্বাইড মেশাননি। তার মানে ঢাকার বাইরে থেকে কৃত্রিম উপায়ে আম পাকিয়ে ঢাকায় আনা হচ্ছে।
ফল পাকাতে কেমিক্যাল মেশানোর অভিযোগ পুরনো। খাদ্যবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা যায়, বিভিন্ন ফলে পর্যায়ক্রমে মেশানো হয় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, কার্বাইড ও ফরমালিনের মতো রাসায়নিক। তাই বাজার থেকে ফল কেনার আগে সাবধান হতে বলছেন পুষ্টিবিদরা। তা না হলে ক্যান্সারসহ মারাত্মক সব রোগের ঝুঁকি রয়েছে। ফলের ভরা মৌসুম শুরুর আগে ভেজাল ও কেমিক্যালরোধে কঠোর অভিযান পরিচালনার দাবি ভোক্তাদের।