আরিফ গাজী :
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় শত শত হেক্টর কৃষি জমির মাটি রাতের আধারে লুটপাট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৫৪টি ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে। এরই জেড়ে কৃষি জমির মাটি রক্ষা করতে গিয়ে মারধরের ঘটনায় খোকন মিয়া নামের এক কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে উপজেলার নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের গকুলনগর গ্রামের কুমিল্লা-সিলেট অঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে^ হাসান ইটভাটায় এই হত্যার ঘটনাটি ঘটে। নিহত কৃষক আব্দুল বারেক ওরফে খোকন মিয়া (৬২) উপজেলার নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের গকুলনগর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয় একাধিক কৃষকদের অভিযোগ, প্রতিনিয়ত রাতের আধারে কৃষি জমি ও গোমতী নদীর মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এ বিষয়ে বহুবার জমির মালিকদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেইনি প্রশাসন। ফলে উপজেলার বেশ কয়েকটি জায়গার খালের পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে ড্রাইভেশন তৈরি করে বেপরোয়া ভাবে দিনে-রাতে কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। স্থানীয় প্রশাসন যদি এ বিষয়ে প্রায়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতেন তাহলে আজ হত্যার ঘটনাটি ঘটতোনা।
নিহত কৃষক খোকন মিয়ার ছেলে কাইয়ুম বলেন, আমাদের জমি পত্তন দেওয়া হয়েছিলো কামাল চেয়ারম্যানের কাছে। এ নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোন প্রকার অভিযোগ ছিলো না। হঠাৎ শুনি আমাদের জমির মাটি নাকি কামাল চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের কাছে বিক্রয় করে দিছে। পরে আমি কামাল চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন জমিতে থাকা তার অতিরিক্ত মাটি বিক্রয় করেছে এবং আমরা যেন বাধা দেই। উনার কথা অনুযায়ী গিয়াস ও তার ছেলে রনিকে আমাদের পক্ষ থেকে কয়েকবার বাধা দিলেও তারা রাতের আধারে ভেকুদিয়ে জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছিলো।
বুধবার রাত ৮টার দিকে অন্যদিনের মতো মাটি কাটায় বাধা দেওয়া হলে গিয়াস ও তার ছেলে রনি আমার বাবা এবং আমাকে বেধরক মারধর শুরু করে। একপর্যায় তারা আমার বাবার তলপেটে সজোড়ে লাথি মারলে তাৎখনিক মাটিতে লুটিয়ে পরে। পরে তাকে স্থানীয়দের সহযোগীতায় চিকিৎসার জন্য কুমিল্লার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আমার বাবাকে মৃত ঘোষণা করে। আমি আমার বাবার খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
হাসান ইটভাটার মালিক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বলেন, আমি অসুস্থ হওয়ার কারণে গতবছর থেকে ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে ইটভাটার জমিতে থাকা ইট তৈরির মাটিগুলো স্থানীয় গিয়াস উদ্দিন ও তার ছেলে রনির কাছে বিক্রয় করে দেই। আমি যেই জমিগুলো পত্তন নিয়ে ইটভাটা তৈরি করেছি সেই মালিকগন কিছুদিন আগে আমাকে মোবাইল ফোনে জানান যে তাদের জমিতে থাকা ইট তৈরির মাটির পাশাপাশি জমির মূল মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে গিয়াস ও তার ছেলে। তখন আমি তাদের বাধা দিতে বলি, কারণ আমি তাদের কাছে কোন জমির মূল মাটি বিক্রয় করিনি। আমি বর্তমানে খুব অসুস্থ ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। তাই এ বিষয়ে আমি আর কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাওয়া মাত্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।