কুমিল্লা প্রতিনিধি :
গত ৯ আগস্ট কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) সংরক্ষিত কাউন্সিলর নাদিয়া নাসরিন তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে নিজেই ১০০ জনকে করোনার টিকা পুশ করেছিলেন। কাউন্সিলের টিকা পুশ করার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
এদিকে, এ ঘটনায় ওই টিকা কেন্দ্রের সুপারভাইজার মো. মুজিবুর রহমান ও অভিযুক্ত কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে গঠিত তদন্ত কমিটি।
শনিবার জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে ওই তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও প্রতিবেদনের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
ডা. মীর মোবারক হোসাইন বলেন, কাউন্সিলর ও টিকা কেন্দ্রের সুপারভাইজার এ ঘটনার জন্য দায়ী। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। আমাদের তদন্ত শেষে প্রতিবেদন সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়, তাঁরা সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। আমাদের ডিজি মহোদয়কেও বিষয়টি অবহিত করেছি। আশা করছি দ্রুত জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ আগস্ট কুমিল্লা সিটি করপোরেশনর হারুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে সরকার দলীয় কিছু লোক আগেভাগে নিজেদের পরিচিতদের টিকা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ওই কেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়।
এ সময় কাউন্সিলর নাদিয়া নাসরিন বেশ কয়েকটি টিকার ভায়েল ও বেশ কিছু বিশেষ সিরিঞ্জ নিয়ে টিকাকেন্দ্রের অদূরে তাঁর নিজের বাড়ির সামনের কার্যালয়ে চলে যান। নাদিয়া নাসরিন কুসিকের ৪, ৫ ও ৬ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর। পরে তাঁর অনুসারীরাও ওই কার্যালয়ে যান। সেখানে তিনি নিজ হাতে টিকাপ্রত্যাশীদের মধ্যে করোনার টিকার (মডার্না) প্রথম ডোজ প্রয়োগ করেন।
এদিকে, গত ১২ আগস্ট কাউন্সিলরের টিকা দেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ওই দিনই জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সমন্বয়ক হাসান মাহমুদ ইকবালকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে প্রথমে ১৪ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। পরে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বর্ধিত করা হয়। এরপর ১৮ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। পরে বৃহস্পতিবার ওই তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।
টিকা প্রয়োগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন কাউন্সিলর নাদিয়া নাসরিন নিজেও। তার ভাষ্য, ওইদিন টিকাকেন্দ্রে ঝামেলা হয়। এরপর টিকা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনি টিকাগুলো তাঁর কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। অতীতে তার টিকা দেওয়ার প্রশিক্ষণ ও সনদ রয়েছে। তাই তিনি নিজেই টিকা প্রয়োগ করেছেন। তবে এতে কারও কোনো অসুবিধা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন