আরিফ গাজী:
ভূতাইল গ্রামের গৃহবধূ তাছলিমা আক্তার(২২)। ২০১৪ সালে বিয়ে হয় একই গ্রামের জয়দুল হোসেনের সাথে। স্বামী জয়দুল সামান্য ফেরিওয়ালা। ফেরি করে চটপটি বিক্রি করেন। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল হওয়ায় বিক্রি তেমন ভাল হতো না। সারাদিন ঘুরে যা রোজগার হতো তা দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা ছিলো তাসলিমার সংসারে। এর মধ্যে তাদের সংসারে তিনটি সন্তানের(দুই ছেলে এক মেয়ে) জন্ম হয়।
বিয়ের পর থেকে স্বামীর অভাবের সংসারে সন্তানদের নিয়ে দুখের মেঘে ঢেকে থাকতো তার মুখের হাসি। ভাঙ্গা একটি ঘরে স্বামী সন্তানদের নিয়ে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করেন তাছলিমা। ২০২০সালে তার বড় সন্তানকে ভূতাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে গিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তৃপ্তি রানী সরকারের সাথে তার কথা হয়। সংসারের অভাব-অনটনের কথা শুনে প্রধান শিক্ষিকা তাকে মুরাদনগর নারী উন্নয়ন ফোরামের সদস্য হতে পরামর্শ দেন। শিক্ষিকার পরামর্শ ও সহযোগিতায় নারী ফোরামের সদস্য হয় তাছলিমা।
নারী ফোরামের সদস্য হওয়ার পরে তাঁর অভারের কথা শুনে তাছলিমাসহ ফোরামের দুইশত সদস্যদের একটি করে সেলাই মেশিন প্রদান করেন ফোরামের প্রধান পৃষ্ঠপোষক স্থানীয় সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন (এফসিএ)। সেলাই মেশিন পেয়ে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাছলিমার। এই মেশিন দিয়ে সচল করেছেন অভাবি সংসারের চাঁকা। মেশিনে কাপড় সেলাই করে অর্থ আয় শুরু করেন। এখানেই দমে যায়নি সে।
প্রতিবেশি আরো ৮/১০জন গৃহবধূ ও কিশোরী মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়ে শিখিয়েছেন কাপড় সেলাই, নকসী কাথা সেলাই, পুথি পাথরের তৈরী ব্যাগ ও হাতপাখাসহ আরো অনেক কিছু তৈরী করা। এখন সে তাদেরকে দিয়ে সেলাইসহ হস্তশিল্পের অনেক কিছুই তৈরি করছেন। যা বিক্রি করে তাদের পারিশ্রমিক দিয়েও কিছু টাকা আয় থাকে তাঁর।
দুই বছরে এই আয়ের দেড় লক্ষ টাকা এবং এনজিও এবং স্থানীয় কয়েকজনের কাছথেকে দুই লক্ষ টাকা ঋণসহ মোট সাড়ে তিন লক্ষটাকা ব্যায়ে ভাঙ্গা টিনের ঘরের জায়গায় বানিয়েছেন একটি আধাপাঁকা বাড়ি। ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়া করাতে পারছেন স্বাচ্ছন্দে। এখন এই আয় থেকে সংসার চালানোসহ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন তিনি।
তাছলিমা আক্তার বলেন একটা সময় আমি খুবই কষ্টে দিন কাটাইতাম, মুরাদনগরের এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন সাহেবের গঠন করা নারী উন্নয়ন ফোরামের কল্যানে আজ আমি স্বাবলম্বী। আমার মাধ্যমে আরো কয়েকটি পরিবারও এখন স্বাবলম্বী হয়েছে। তাবে ঘরটা তৈরী করতে গিয়ে আমি দুই লক্ষ টাকা ঋণ করতে হয়েছে। সরকার অথবা প্রশাসন যদি আমাকে বিনা সুদে কিছু টাকা ঋণের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে এই এনজিওর কিস্তি থেকে মুক্ত হতে পারতাম।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাকসুদা আক্তার বলেন, তাছলিমা খুবই পরিশ্রমী একটি মেয়ে, সে মুরাদনগরে অন্যান্যদের জন্য রোলমডেল হয়ে থাকবে। ঋণের ব্যাপারে আমাদের বাধ্যবাধকতা আছে। আমরা একজনকে তিনধাপে সর্বোচ্চ ১৫হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারি।
নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি রেবেকা সুলতানা বলেন, আমাদের ফোরামের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন (এফসিএ) চলতি পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি ফান্ড গঠন করে দিয়েছেন। ফান্ডের অর্থের পরিমানটা আরেকটু বৃদ্ধি হলে আমরা সদস্যদের মাঝে বিনা সুদে ঋণ বিতরণ শুরু করবো।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নারী উন্নয়ন ফোরামের উপদেষ্টা অভিষেক দাশ বলেন, তাছলিমা যেভাবে ঘুরে দাড়িয়েছে তাকে দেখে যদি নারী ফোরামের অন্য সদস্যরা অনুসরন করে তাহলে ফোরাম গঠনের উদ্দেশ্য সফল হবে। চলতি মার্চ মাসে ফোরামটি ৩য় বর্ষে পর্দাপণ করেছে। এখন এর সদস্য সংখ্যা তিনহাজার দুইশত। আমরা গঠনতন্ত্র তৈরীর কাজ করছি। ফান্ডের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে আমরা অচিরেই বিনাসুদে ঋণ কার্যক্রম চালু করতে পারবো।