লাকসাম প্রতিনিধি :
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপির অবদানে কুমিল্লার লাকসামে স্বাস্থ্যখাতের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। গত কয়েক বছরে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি মন্ত্রীর ব্যক্তিগত অনুদানে পাল্টে গেছে লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র। চলমান করোনা পরিস্থিতিতেও মন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক করোনা প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা নিশ্চিৎকরণে নিরলস ভূমিকা রাখছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে সন্তুষ্ট লাকসামের সর্বস্তরের সেবাগ্রহীতারা।
জানা যায়, একসময় লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘিরে জনসাধারণের অভিযোগের অন্ত ছিলো না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন সেবাগ্রহীতারা। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি লাকসামের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে বিশেষ ভাবে মনোনিবেশ করেন। গত এক যুগে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি মন্ত্রীর ব্যক্তিগত অনুদানে পাল্টে গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবকাঠামোগত উন্নয়নে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি ফুল বাগানের মাধ্যমে হাসপাতালের আঙ্গিনায় সবুজায়ন করা হয়েছে। অন্ধকার দূরীকরণে অতিরিক্ত ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। হাসপাতালের প্রবেশপথের সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। আবাসিক চিকিৎসকদের বাসকক্ষের সার্বিক উন্নয়ন করা হয়েছে। বর্তমান পরিচ্ছন্ন ও সুসজ্জিত পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট সেবাগ্রহীতারা।
একসময় লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক অনুপস্থিতির অভিযোগ থাকলেও বর্তমানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল আলীর নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক রুটিন অনুযায়ী যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসক কিংবা নার্সের কিছুটা সংকট থাকলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে তা দূরীভূত হয়েছে। প্রতিদিন আবাসিক রোগীদেরকে মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। রয়েছে সার্বক্ষণিক পর্যাপ্ত ঔষধের সরবরাহ এবং রোগী পরিবহনের জন্য এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।
জরুরী বিভাগ, অন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে রয়েছে টিকাদানের ব্যবস্থা। হাসপাতালে হাইফ্লো অক্সিজেন ক্যানুলা ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন চালুকরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিকে ১৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীতকরণের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক ভবন, পুরাতন ভবন ও কনফারেন্স রুমের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। হাসপাতাল আঙ্গিনাকে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত রাখতে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একসময় এখানে অর্থের বিনিময়ে সনদ প্রদানের অভিযোগ থাকলেও বর্তমানে এ জালিয়াতি বন্ধে কঠোর ভূমিকা রাখছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল আলী।
লাকসামে বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে থেকেই করোনা প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে মাঠে আছেন স্বাস্থ কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ১৬ এপ্রিল নারায়নগঞ্জ ফেরত এক যুবকের করোনা আক্রান্তের মধ্য দিয়ে লাকসামে করোনার প্রবেশ ঘটে। সমগ্র উপজেলায় এ পর্যন্ত ৩২৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ২০৯ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৯ জন। বাকি ১২৯ জন আইসোলেশানে আছেন।
স্বাস্থ কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ‘করোনা র্যাপিড রেসপন্স টিম’ গঠন করে করোনা আক্রান্তদের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল আলী। ইতোমধ্যে হাসপাতালে চালু করা হয়েছে আইসোলেশান ওয়ার্ড, স্যাম্পল কালেকশন বুথ ও হাত ধোয়া কর্ণার। করোনা প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ‘করোনা র্যাপিড রেসপন্স টিম’ এর সাথে সম্মিলিত ভাবে কাজ করছেন লাকসামের জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সার্বক্ষণিক মাঠে সক্রিয় থেকে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলী। সুস্থ্য হয়ে পুনরায় জনসেবায় মাঠে আছেন তিনি।
এছাড়াও করোনা প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাঠে আছেন পৌর মেয়র অধ্যাপক আবুল খায়ের, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম হিরা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পড়শী সাহা, পৌর প্যানেল মেয়র-১ বাহার উদ্দিন, প্যানেল মেয়র-২ আব্দুল আলিম দিদার, কাউন্সিলর প্রভাষক গোলাম কিবরিয়া সুমন, মোহাম্মদ উল্লাহ, আফতাব উল্লাহ চৌধুরী ঝন্টুসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা।
সম্প্রতি লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা সেবাগ্রহীতাদের সাথে প্রতিবেদকের কথা হয়। ষাটোর্ধ্ব মোখলেছুর রহমান জানান, তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। কয়েকদিন পরপরই তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মনোরম পরিবেশ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুন্দর ব্যবহারের প্রশংসা করেন তিনি। আব্দুর রহিম নামের অপর এক সেবাগ্রহীতা জানান, আগে হাসপাতালে আসলে তাদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এখন যে কোনো মুহূর্তে আসলেই ডাক্তার পাওয়া যায়।
হাসপাতালের সেবার মান প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আলী বলেন, ‘চিকিৎসা মানুষের মৌলিক চাহিদা। বর্তমান সরকারের নানামুখী উন্নয়নের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন। জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিৎকরণে আমরা বদ্ধপরিকর। সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি মাননীয় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত অর্থায়নে হাসপাতালের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবার প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত করেছি। হাসপাতালের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো প্রকার অনিয়ম কিংবা অবৈধ লেনদেনের সাথে সম্পৃক্ত নেই।
এছাড়াও আমরা হাসপাতাল আঙ্গিনায় প্রতারক চক্রের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছি। এখানে চিকিৎসা নিতে এসে কেউ প্রতারিত হন না। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে আমরা সেবাগ্রহীতাদের জন্য নিরাপদ সেবাপ্রাপ্তির নির্ভরযোগ্য চিকিৎসালয় হিসেবে গড়ে তুলেছি। আগামী দিনেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’