প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রায় শেষ প্রান্তে পৃথিবী। এ কঠিন বাস্তবতায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল মাটির সবুজ ক্যাম্পাসে পরিবেশ রক্ষায় এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। কৃত্রিম উপায়ে গড়ে তুলেছেন পাখিদের নিরাপদ আবাসন ‘পাখি নিবাস’। যা এরইমধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগে প্রশংসায় ভাসছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘পাখির জন্য ভালোবাসা’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২০২২ সালের শুরু থেকে পাখিদের নিরাপদ আবাসনের জন্য গাছে ও আবাসিক হলে কলসি স্থাপনের মাধ্যমে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘অভয়ারণ্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ এই উদ্যোগ নেয়। ৫০ সদস্য বিশিষ্ট এ সংগঠনটির নিজস্ব অর্থায়নের পাখিদের ভালোবাসায় বিভিন্ন গাছে এবং আবাসিক হল মিলিয়ে প্রায় ৭০টিরও অধিক পাখি নিবাস (মাটির কলস) স্থাপন করেছেন।
এছাড়া তারা প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। যা বাস্তবায়নে অর্থের প্রয়োজনীয়তা আছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, প্রশাসনিকভাবে যদি আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়, তাহলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হবে।
মুক্তমঞ্চ সংলগ্ন পাখি নিবাস এলাকায় শিক্ষার্থীদের অনাগোনাও বেড়েছে বেশ উল্লেখ যোগ্য হারে। সকালের হিমেল হাওয়া আর পড়ন্ত বিকেলে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ উপভোগ করতে দলবেঁধে সেখানে যান শিক্ষার্থীরা।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া সুলতানা বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এমনিতেই সুন্দর। এতে আছে সবুজের সমারোহ। তার ওপর পাখিদের এমন অভয়ারণ্য আর কিচিরমিচির শব্দে আসলে বিকেল বেলায় মনটা সতেজ করে তোলে। অভয়ারণ্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পাখি নিয়ে যেভাবে ভেবেছে আমাদের প্রত্যেকে তাদের সঙ্গে সহযোগিতায় এগিয়ে আসা উচিত।
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তফা কামাল রিফাত বলেন, প্রকৃতিতে সবাই মিলেমিশে থাকলে ভারসাম্য বজায় থাকে। পাখি নিবাস আমাদের ক্যাম্পাসে একটি উল্লেখযোগ্য জায়গা। যখনি এর পাশ দিয়ে যাই তখনি পাখিদের কিচিরমিচিরে শব্দে মন ভালো হয়ে যায়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা সকাল বিকেল দলবেঁধে কিচিরমিচির শব্দ উপভোগ করেন।
অভয়ারণ্যের সাধারণ সম্পাদক কাতিব হাসান মুরাদ বলেন, কুবির একমাত্র পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন অভয়ারণ্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশেপাশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা করা। পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ, বৃক্ষ পরিচিতি এবং পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল নিয়ে কাজ করে সংগঠনটি। অরাজনৈতিক ও অলাভজনক পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন হওয়ায় সকলের পছন্দের শীর্ষে সংগঠনটি। প্রশাসনিকভাবে যদি আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে সংগঠনটি দ্রুত এগিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সংগঠনটির উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী প্রকৃতি ও পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শুরু থেকেই আমি সংগঠনটির সঙ্গে আছি। এরই মধ্যে তারা বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে। যা প্রশংসনীয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য পাখি সংরক্ষণ ও নিরাপদ আবাসন। তারা সফলতাও পেতে শুরু করেছে। পাখিদের নিরাপদ আবাসন ও অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে ক্যাম্পাসে বিপুল পরিমাণ ফলগাছের চারা রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অভয়ারণ্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে কুবি ক্যাম্পাসে পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন কাজ শুরু করে। তারা বৃক্ষ পরিচিতি কার্যক্রমের অংশ হিসাবে বিভিন্ন গাছে বাংলা ও বৈজ্ঞানিক নাম সম্বলিত ফলক ঝুলিয়ে থাকেন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে গাছের চারা বিতরণ কর্মসূচি পালন করে থাকেন।