চলে গেলেন বঙ্গবন্ধুর সহচর ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার

মাজহারুল ইসলাম বাপ্পি ।।

৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সৈনিক ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর আলী তাহের মজুমদার আর নেই। শনিবার সকাল ৭টায় নিজ জন্মস্থান কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়। শনিবার বিকাল ৫টায় নিজ গ্রামে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন। ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার এর মৃত্যুর খবর শুনে দেখতে যান কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর, জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহম্মেদ পিপিএম (বার) সহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।

ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার এর জীবনী ও পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার যে ক’জন সাহসী বীর সন্তান ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে নিজেদের জীবন বাজি রেখে বাংলা ভাষা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাদের অন্যতম কুমিল্লা সদর দক্ষিণের কৃতি সন্তান আলী তাহের মজুমদার। রাজধানী ঢাকার বাহিরে কুমিল্লায় তাঁর বাড়ি অবস্থিত হওয়ায় এমনকি আঞ্চলিকতার প্রভাব না থাকায় ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পরও ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অর্থাৎ শত বছর বয়সেও একুশে পদক থেকে বঞ্চিত ছিলেন। দেশের সূর্য সন্তান ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত চাঁদপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম মোঃ চারু মজুমদার এবং মাতা সাবানী বিবি। পরিবারের ৫ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তৃতীয়। কুমিল্লায় মূলত ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৪৮ সালে। পাকিস্তানের জিন্নাহ সাহেব যখন ঢাকায় এসে বলল উর্দু’ই হবে এ দেশের এক মাত্র রাষ্ট্রভাষা।তাৎক্ষনিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জিন্নাহ’র বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ১৯৪৮ সালে কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ দিক থেকে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে একটি মিছিল নিয়ে আসে।

এ খরব শুনে যুবলীগ ও তমুদ্দীন মজলিসের কর্মীরা এবং কুমিল্লার স্কুল কলেজের ছাত্ররা পাল্টা মিছিল বের করে। এই মিছিলে তারা উর্দু ভাষার বিপক্ষে প্রতিবাদ জানায়। এক সময়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়া ছুড়ি হয় এতে বেশ ক’জন আহত হয়। ফলে উর্দু ভাষার পক্ষে মিছিল কারীরা ওই সময় কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী পর্যায়ে ঢাকা ও কুমিল্লায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রায় মিছিল হতো। আর এই আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ রূপধারন করে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে। অতীন্দ্র মোহন রায় এসে যখন উদ্দেশ্যে করে বলেন, যে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে রফিক, জব্বার ও বরকত সহ আরো অনেকেই নিহত হয়েছে। এই কথা শুনার পর আলী তাহের মজুমদার সহ অনেকে কুমিল্লার সকল স্কুল, কলেজের ছাত্রদেরকে ভাষা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পরার আহব্বান জানায়।

তখন রাজগঞ্জ রাণীর বাজার সহ পুরো কুমিল্লায় “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” এই গ্লোগান নিয়ে তারা কঠিন আন্দোলনে ঝাপিয়ে পরে। আর এই আন্দোলনের প্রতিটি স্তরে প্রধান ভূমিকায় সক্রিয় ছিলেন আজকের আলোচিত ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। অথচ আজ ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পরও মানবেতর জীবন যাপন করেই বিদায় নিলেন ৫২ এর ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। যারা ঢাকাসহ সারা দেশে ভাষা আন্দোলনের জন্য নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন তারা অনেকেই বীরচিত একুশে পদক অর্জন করেন। কিন্তু তিনি ঢাকার বাহিরের মফস্বলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সন্তান হওয়ায় বীরচিত পদক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি জীবদ্দশায় বলেছিলেন, মনে হয় মরার আগে বীরচিত একুশে পদক আমার ভাগ্যে জুটবে না। শেষ পর্যন্ত আলী তাহের মজুমদার এর ভাগ্যে আর একুশে পদক জুটল না।

 

 

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি ।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
error: ধন্যবাদ!