আমরা সবাই জান্নাতে যেতে চাই; কিন্তু জান্নাতে যাওয়ার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা কি আমরা করছি?
আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাতে যাওয়ার অনেক পন্থা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে যাওয়ার পথটি আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। কিন্তু দুনিয়াবি ব্যস্ততার মধ্যে ডুবে থেকে মাঝে মাঝে আমরা এই সহজ পথটিও ভুলে যাই।
নিম্নে হাদীসের আলোকে জান্নাতে যাওয়ার ২৫টি পথ উল্লেখ করা হল।
১. আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে কোনো শরীক না করে ঈমান নিয়ে যে বান্দা আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে দেখা করবে (মারা যাবে), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী)
২. যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা.কে বিশ্বাস করবে, সালাত কায়েম করবে ও রমজানে রোজা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (বুখারী)
৩. যে ব্যক্তি বলবে, রাদিতু বিল্লাহি রাব্বা, ওয়া বিল ইসলামী দ্বীনা, ওয়া বিমুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যাও ওয়া রাসূলা অর্থাৎ, আমি আল্লাহ তায়ালাকে রব হিসেবে, ইসলামকে ধর্ম হিসেবে এবং মুহাম্মদ সা. কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। তার জন্য জান্নাত অবধারিত। (আবু দাউদ)
৪. যখন কোনো ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার কাছে তিনবার জান্নাত চায়, তখন জান্নাত বলে, হে আল্লাহ! আপনি তাকে জান্নাত দিয়ে দিন। (তিরমিযী)
৫. যে ব্যক্তি বলবে সুবহানাল্লাহিল আজীম ওয়া বিহামদিহী, জান্নাতে তার জন্য একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে। (তিরমিযী)
৬. আল্লাহ তায়ালার নিরানব্বইটি সুন্দর সুন্দর নাম আছে। যে ব্যক্তি এই নামগুলোয় পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে তদনুযায়ী আমল করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী)
৭. সত্যবাদিতা মানুষকে তাকওয়ার পথে পরিচালিত করে, আর তাকওয়া জান্নাতের পথে পরিচালিত করে। (বুখারী)
৮. যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করল, আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তার জন্য এরকম একটি বাড়ি নির্মাণ করবেন। (বুখারী)
৯. যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে মুয়াজ্জিনের (আজানের) উত্তর দেয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (নাসাঈ)
১০. যে ব্যক্তি ১২ বছর যাবৎ আজান দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকে, জান্নাত তার জন্য অবধারিত হয়ে যায়। (ইবনে মাজাহ)
১১. যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডা নামাজ (ফজর ও আসর) নিয়মিত আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী)
১২. যে ব্যক্তি জামায়াতে সালাত আদায়ের জন্য সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত মসজিদে যাবে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি সম্মানজনক স্থান নির্ধারণ করবেন যেখানে তার জন্য থাকবে উত্তম মেহমানদারির ব্যবস্থা। (বুখারী)
১৩. যে উত্তরূপে অজু করল, অতঃপর খুশু-খুজুর সঙ্গে দুই রাকাত (তাহিয়্যাতুল অজু) সালাত আদায় করল, জান্নাত তার জন্য আবশ্যক হয়ে যায়। (আবু দাউদ)
১৪. যে ব্যক্তি দিনে এবং রাতে বারো রাকাত (নফল) সালাত আদায় করবে, জান্নাতে তার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। (নাসাঈ)
১৫. যে ব্যক্তি দ্বীনি জ্ঞান অন্বেষণে বের হল, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতের পথকে সহজ করে দেবেন। (তিরমিযী)
১৬. রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, আমি দেখলাম এক ব্যক্তি রাস্তায় পড়ে থাকা একটি গাছ অপসারণের জন্য জান্নাতে আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেই গাছটি রাস্তায় পড়ে থাকার কারণে মানুষের চলাচলে কষ্ট হচ্ছিল। (মুসলিম)
১৭. রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী জিনিস (জিহ্বা) আর দুই রানের মধ্যবর্তী জিনিস (গোপনাঙ্গ) হেফাজত করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদারি গ্রহণ করব। (বুখারী)
১৮. অহংকারমুক্ত, চুরিমুক্ত ও ঋণমুক্ত অবস্থায় যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (ইবনে মাজাহ)
১৯. রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যার দুটি কন্যাসন্তান আছে এবং সে তাদেরকে উত্তম শিক্ষা-দীক্ষায় লালনপালন করে, সে আর আমি জান্নাতে এইভাবে প্রবেশ করব। (এই বলে তিনি তার হাতের দুটি আঙ্গুল উত্তোলন করে দেখালেন) (তিরমিযী)
২০. যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশে কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায়, একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকে, তুমি আনন্দিত হও, তোমার পদক্ষেপ বরকতময় হোক এবং জান্নাতে তোমার জন্য একটি সম্মানজনক স্থান দেয়া হোক। (তিরমিযী)
২১. যে মুমিন আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদে বের হয়, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (বুখারী)
২২. রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, ক্ষুধার্তকে খাওয়াও, রাতের বেলায় মানুষ ঘুমন্ত থাকা অবস্থায় সালাতে দাঁড়িয়ে যাও, তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (ইবনে মাজাহ)
২৩. রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, এক উমরাহ তার আগের উমরাহ থেকে এই পর্যন্ত সব গুনাহকে ধ্বংস করে দেয়, আর একটি কবুল হজ্বের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। (বুখারী)
২৪. যার জীবনের শেষ কথা হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে যাবে। (আবু দাউদ)
২৫. যে ব্যক্তি দিনের বেলায় একবার সায়্যিদুল ইসতিগফার পাঠ করবে, সে ওই দিনে মারা গেলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি রাতের বেলায় একবার সায়্যিদুল ইসতিগফার পাঠ করবে, সে ওই রাতে মারা গেলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিযী)
সায়্যিদুল ইসতিগফার-
আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আঊযু বিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিযাম্বি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।
তবে মনে রাখতে হবে, কুরআন-সুন্নাহ’য় বর্ণিত জান্নাতে যাওয়ার যেই পথই অবলম্বন করা হোক না কেন, সবকিছুর মূলে কিন্তু রয়েছে তাকওয়া কিংবা আল্লাহ ভীরুতা। তাকওয়া ছাড়া কোনো ভালো কাজেরই মূল্য নেই।