কুবি প্রতিনিধি :
ফেসবুকে নির্দিষ্ট কয়েকজনকে উদ্দেশ্য করে ‘১০০ কোটি টাকা খরচ করেও সভাপতি-সেক্রেটারি হতে পারবি না’ বলে মন্তব্য করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ। তাঁর এই মন্তব্যের পর ছাত্রলীগের কমিটিতে আসতে আর্থিক লেনদেন করতে হয় কি না, এমন প্রশ্ন উঠেছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সমন্বিত হল সম্মেলন স্থগিতের খবর সামনে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপ ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)’-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনিই এ পোস্ট দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন ইলিয়াস হোসেন।
৩৮ লাইনে লেখা কুবি ছাত্রলীগ সভাপতির ওই পোস্টে বলা হয়, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি কালকে হলেও এই ২-৩ জন *** (অশোভন সম্বোধন) গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফৌজদারি মামলা, প্রমাণসহ অসংখ্য চুরির অভিযোগ, ইয়াবা খাওয়ার ভিডিওসহ বিভিন্ন আমলনামার কারণে সভাপতি-সেক্রেটারি তো দূরের কথা, সাধারণ কোনো পদে আসতে পারিস কি না দেখব। এত অভিযোগ নিয়ে ১০০ কোটি টাকা খরচ করেও সভাপতি-সেক্রেটারি হতে পারবি কি না চ্যালেঞ্জ দিলাম।’
এই মন্তব্যের জেরে ছাত্রলীগের পদে আসতে আর্থিক লেনদেন করতে হয় কি না এবং কাকে উদ্দেশ্য করে এমন মন্তব্য করেছেন, ইলিয়াস হোসেন সবুজকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘রেজা (কুবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক) তো নানা জায়গায় কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। কুমিল্লা দক্ষিণ, মহানগর আওয়ামী লীগের যত নেতা আছে, মিডিয়াসহ সবাইকে সে টাকা দিয়ে বেড়াচ্ছে।’
এসব টাকা ছাত্রলীগের কমিটির জন্য দিচ্ছে কি না, জানতে চাইলে ইলিয়াস বলেন, ‘কমিটিতে আসার জন্য পরিবেশ তৈরি করতে সে এসব টাকা খরচ করছে।’
এক বছরের জন্য অনুমোদিত কুবি ছাত্রলীগের ইলিয়াস-মাজেদ কমিটি পাঁচ বছর ধরে টিকিয়ে রাখতেও আর্থিক লেনদেনের প্রয়োজন হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলিয়াস বলেন, ‘যোগ্যতার কারণেই আমার কমিটি আসছে। আমার কমিটি যোগ্যতার কারণে টিকে আছে।’
কুবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা ই এলাহীর বিরুদ্ধে এমন আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজা বলেন, ‘আমার জানামতে তো ছাত্রলীগের কমিটিতে আসতে রাজনীতি করতে হয়, আর্থিক লেনদেন করা লাগে এমন কিছু তো আমি কখনো শুনিনি। যারা এসব কথা বলে তারাই ভালো জানবেন কোথায়, কীভাবে আর্থিক লেনদেন করতে হয়। আমি কোথাও ছাত্রলীগের কমিটিতে আসার জন্য অর্থ দিইনি।’
ফৌজদারি মামলা এবং মাদক গ্রহণের অভিযোগের বিষয়ে রেজা বলেন, ‘আমার নামে যদি এসব থেকে থাকে তবে সেটা দেখার জন্য প্রশাসন আছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আছে। এটি তো ওনার (ইলিয়াস) দেখার বিষয় না।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি তানজিমুল শিমুল বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটিতে আসতে আর্থিক লেনদেনের কোনো প্রশ্নই আসে না। ইলিয়াস যা বলেছে তা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। তাঁর কথায় কিছু হবে না। ছাত্রলীগের একটি গঠনতন্ত্র আছে, সে অনুযায়ী স্বচ্ছ উপায়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি হবে।’
কেন্দ্রীয় এ নেতা আরও বলেন, ‘কুবির কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। যেকোনো সময় তা ভেঙে দেওয়া হবে। কমিটি অনেক দিন হয়ে যাওয়ায় সে হয়তো এসব বলছে। তার মন্তব্যের ব্যাপারে প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সূত্র: আজকের পত্রিকা