আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এখন পৌরসভা নির্বাচনে যারা আমার নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা করবেন তারা আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা পাওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। নৌকাবিরোধীদের নৌকা প্রতীক দেব না। এ সময় সারা দেশ থেকে আসা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অভিযোগের ফাইল দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের হস্তান্তর করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। গতকাল বিকাল ৪টা থেকে রাত প্রায় সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় আনুষ্ঠানিক আলোচনায় এমন বার্তা দেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সভায় চতুর্থ ধাপের ৫৬ পৌরসভার প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। এতে অধিকাংশ জায়গায় নতুন মুখ ও নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জানুয়ারির মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন আসছে জানিয়ে বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে। সুখবর হচ্ছে আমরা ভ্যাকসিন পাচ্ছি। আমরা সরকারিভাবে ভ্যাকসিন নিয়ে আসব। সেগুলো মানুষের মাঝে বিনামূল্যে দেওয়া হবে। কখন, কীভাবে এবং কারা প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপে এ টিকা পাবে সে তথ্য তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও যেন মানুষ টিকা আনতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। মানুষের জীবন আগে। সবাই যেন টিকা নিতে পারে সে ব্যাপারটি অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্লেন (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।
নৌকার পক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দলে অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মী রয়েছেন। তাদের অনেকেই যোগ্য। কিন্তু একজনকে বেছে নিতে হয়। প্রথমে কিছু মান-অভিমান থাকলেও কর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেন। কিন্তু সমস্যা কিছু এমপি-মন্ত্রী-নেতা। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর জন্য তারা নৌকার বিরোধিতা করেন। আমার সাফ কথা, সবার আমলনামা আমার হাতে। যারা পৌরসভায় নৌকার বিরোধিতা করবেন তারা আগামীতে সংসদ নির্বাচনে নৌকা পাওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। নৌকা দেব না। বৈঠকে প্রতিটি পৌর এলাকার প্রার্থীর আমলনামা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। বিগত সময়ে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন এবারও তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, আগে যারা বিদ্রোহী ছিলেন এবারও আমরা তাদের মনোনয়ন দিইনি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, দলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক এবং বিশেষ করে করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকজন নারীকে এবার দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। অভিযোগের কারণে আগের বেশ কয়েকজন মেয়রকে এবার আর মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক পৌরসভা নির্বাচনে (চতুর্থ ধাপ) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নামের তালিকা দেওয়া হলো : ঠাকুরগাঁও সদরে আঞ্জুমান আরা বেগম, রাণীশংকৈলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান। লালমনিরহাট সদরে মো. মোফাজ্জল হোসেন, পাটগ্রামে মো. রাশেদুল ইসলাম স্ইুট। জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে মো. শহীদুল আলম চৌধুরী, কালাইয়ে মোছা. রাবেয়া সুলতানা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সৈয়দ মনিরুল ইসলাম। রাজশাহীর পবার নওহাটায় মো. হাফিজুর রহমান হাফিজ, গোদাগাড়ীতে মো. অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস, তানোরে মো. ইমরুল হক, বাগমারার তাহেরপুরে মো. আবুল কালাম আজাদ। চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে রফিকুল ইসলাম, আলমডাঙ্গায় হাসান কাদির গনু। যশোরের চৌগাছায় নূর উদ্দীন আল-মামুন, বাঘারপাড়ায় মো. কামরুজ্জামান। বাগেরহাট সদরে খান হাবিবুর রহমান। সাতক্ষীরায় শেখ নাসেরুল হক। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিপুলচন্দ্র হাওলাদার। বরিশালের মুলাদীতে মো. শফিকউজ্জামান, বানারীপাড়ায় সুভাস চন্দ্র শীল। টাঙ্গাইলের গোপালপুরে রকিবুল হক ছানা, কালিহাতীতে মোহাম্মদ নুরুন্নবী। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে আনোয়ার হোসেন, হোসেনপুরে আবদুল কাইয়ুম খোকন, করিমগঞ্জে মুসলেহ উদ্দিন। মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমে আবদুস ছালাম। নরসিংদীতে আশরাফ হোসেন সরকার, মাধবদীতে মোশাররফ হোসেন। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নজরুল ইসলাম, সদরে মহম্মদ আলী চৌধুরী। ফরিদপুরের নগরকান্দায় নিমাইচন্দ্র সরকার। মাদারীপুরের কালকিনিতে এস এম হানিফ। শরীয়তপুরের ডামুড্যায় কামাল উদ্দিন আহমদ। জামালপুরের মেলান্দহে শফিক জাহেদী রবিন। শেরপুর সদরে গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া, শ্রীবরদীতে মোহাম্মদ আলী লাল মিয়া। ময়মনসিংহের ফুলপুরে শশধর সেন। নেত্রকোনা সদরে নজরুল ইসলাম খান। সিলেটের কানাইঘাটে লুৎফুর রহমান, চুনারুঘাটে মোহাম্মদ সাইফুল আলম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় তাকজিল খলিফা। কুমিল্লার হোমনায় নজরুল ইসলাম, দাউদকান্দিতে নাইম ইউসুফ। চাঁদপুরের কচুয়ায় নাজমুল আলম, ফরিদগঞ্জে আবুল খায়ের পাটওয়ারী। ফেনীর পরশুরামে নিজাম উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী। নোয়াখালীর চাটখিলে নিজাম উদ্দিন, সোনাইমুড়ীতে নুরুল হক চৌধুরী। লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে এম মেজবাহ উদ্দিন। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মোহাম্মদ জোবায়ের, পটিয়ায় আইয়ুব বাবুল, চন্দনাইশে মু. মাহবুবুল আলম। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় শামছুল হক। রাঙামাটি সদরে আকবর হোসেন চৌধুরী ও বান্দরবানে মোহাম্মদ ইসলাম বেবী মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় এসব পৌরসভায় চূড়ান্ত প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।