এক পলকেই বিচার নয়

মোঃ জুনায়েদ আল হাবিব :
প্রথমে একটা উদাহরণ দিয়েই শুরু করা যাক।জনৈক এক শিক্ষক যিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। দূর থেকে পরিচিত সবার মনে হতেই পারে যে অধ্যাপক সাহেব বোধহয় হাসতে জানেন না, দেখতে খুব গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ তিনি। প্রথমে দেখলেই হয়তো সবার ভয় ভয় লাগতে পারে।
আমিও প্রথমে এমনটা-ই ভাবতাম, ভয়ও পেতাম। সালামও কাঁচুমাচু হয়েই দিতাম। ভাবতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবার প্রাক্তন বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন ডীন, তাও আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের! তাই হয়তো ডীন-ডীন, চেয়ারম্যান-চেয়ারম্যান ভাব নিয়ে থাকেন!
কিন্তু সময়ের কালক্রমে দেখতে দেখতে ভাবনার জগত পুরোটায় উল্টো দিকে মোড় নিচ্ছিল। তবে হাসতে জানুক আর না জানুক শিক্ষাদান বা পাঠদান কৌশলটা ভালোই জানা আছে। আর তার ব্যক্তিত্বের কথা নাই বা বললাম। সময়ের পরিক্রমায় আস্তে আস্তে আমার ধারণাও বদলাতে শুরু হলো।
প্রথম যেদিন দেখেছিলাম ধারণাটা জানি কেমন ছিলো। যদি কোনো দিন কথা না হতো তাহলে হয়তো এই নেতিবাচক ধারণাটায় থেকে যেতো কিন্তু ক্লাসে কথা বলতে বলতে, জানতে থাকি, চিনতে থাকি। যেই ভাবতাম হাসতে জানে না মাঝে মাঝে তো দেখি ক্লাসে হাসছেও। আস্তে আস্তে ধারণাটাও বদলাতে থাকে। এটা কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। প্রথমে দেখি একরকম কিন্তু কথা বলার পর বা ভালো করে পরিচিত বা জানার পর দেখি অন্যরকম। এক পলকের বিচারটা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হতে শুরু করে।
” যা চোখে দেখি তা হয়তো সত্য না
যা চোখে দেখিনা তা-ই হয়তো সত্য।
কিংবা;
যা চোখে দেখি তা হয়তো সত্য
যা চোখে দেখিনা তা হয়তো সত্য না ”
যেই স্যারের কিছু কথাকে কেন্দ্র করে এই লিখা সেই স্যারকে দিয়েই উদাহরণটা লিখতে হলো। এর চেয়ে ভালো উদাহরণ আমি আর খুঁজে পাইনি। কারন স্যারকে প্রথমে দেখার পর না চিনে বা না জেনে যা ভাবতামস্যারের-ই অন্য কিছু কথায় তা মিলিয়ে নিচ্ছিলাম।
আমাদের সমাজে এমন অহরহ হয়। এমন অনেক আছে যাদেকে দেখলেই নেতিবাচক চিন্তা আসে, হয়তো বদমেজাজি বা খুব একটা সুবিধার না কিন্তু বাস্তবতা হয় ভিন্ন। আমাদের অধ্যাপক স্যারকে শুধু একটা উদাহরণ হিসেবে দেখালাম। যে এক পলকের একটু দেখায় একজনকে বিচার করা যায় না যে, সে কতটুকু ভালো বা মন্দ। যার জলন্ত উদাহরণ আমাদের অধ্যাপক সাহেব।
দিনটি ছিলো মঙ্গলবার, ২-ই অক্টোবর । স্যার ক্লাসে এসে প্রতিদিনের মতোই লেকচার দিচ্ছিলেন। তবে আজকের লেকচারের কিছু কথা মনে চুম্বকের মত আকর্ষণ করলো। তাই স্যারের সেই লেকচারের কিছু কথা বসে বসে ভাবছিলাম। কিছু না লিখে স্বস্তি পাচ্ছিলাম না তাই স্যারে কথাগুলোকে একটু সাজিয়ে লিখতে শুরু করলাম। কথাগুলো একেক জনের কাছে একেক রকম মনে হতেই পারে কিন্তু আমি আমার দিক থেকে বলছি। আপনার যদি ভিন্নমত থাকে এই কথা নিয়ে তাহলে আপনার ভিন্নমতের প্রতি রইল সম্মান।
একজন মানুষকে প্রথম দেখাতে ভালো লাগতেই পারে কিন্তু প্রথম দেখাতে বা একদিনের পরিচয়ে তাকে চেনাও যায় না, তার সম্পর্কে ভালো মন্দ বিচারও করা যায় না।
একজন মানুষকে চিনতে হলে বা জানতে হলে তাঁর সাথে দীর্ঘদিন দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়, থাকতে হয়। তাঁর সাথে উঠাবসা করতে হয়, খেতে হয়। তবেই তার সম্পর্কে জানা যায় বা অনেকটা চেনা যেতে পারে।
এক ছাদের নিচে বহুদিন এক সাথে থেকে খেয়েও একজন আরেক জনকে ভালো করে জানতে পারে না বা চিনতে পারে না। সে জায়গায় কি করে এক পলকের দেখায় বা কিছু কথা বলে তাকে চিনতে পারি বা বিচার করতে পারি তাঁর ভালো মন্দ আমরা?যেমন ভালো করে না জেনে বা না চিনে দূর থেকে অল্প দেখেই অধ্যাপক স্যার সম্পর্কে আমি প্রথমে যা ভেবেছিলাম কিন্তু সময়ের পালাক্রমে কেমন করে যেন চিন্তাধারা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলো।কেউ কেউ এই অল্প সময়েই বিচার করে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। একজন মানুষ সম্পর্কে জানার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হতে পারে তাঁর স্বপ্ন সম্পর্কে জানা। এটার মাধ্যমে একজন মানুষ সম্পর্কে মোটামুটি বারো আনায় জানা যায় বা উপলব্ধি করা যায়।
আরো ভালো জানা যায় যখন কোনো প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় তখন সে কেমন করে, কেমন হয় তার আচরন বা কর্মকান্ড। প্রতিকূল পরিবেশে কেমন হয় তার সাথে সম্পর্ক। কথায় আছে দুঃসময় এলে পরে বন্ধু চেনা যায়।
যে প্রতিবেশি, আত্মীয়, বন্ধু কিংবা বান্ধবী দিনের পর দিন শুধু নিজের স্বার্থেই আপনাকে আমাকে ব্যবহার করছে। স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটলেই যে কেটে পরছে। আরেক জন আত্মীয়, বন্ধু বা বান্ধবী সুসময় কিংবা দুঃসময়, সব সময় পাশে থাকছে। সব কিছু সময় ও পরিবেশ অনুযায়ী যোজন বিয়োজন করছে।তাহলে কে তাহলে প্রকৃত সঙ্গী ?প্রশ্ন থাকলো।
আমাকে হঠাৎ আপনি দেখলেন একজন মানুষের সাথে খুব রাগারাগি করছি, হতে পারে সে খুব দরিদ্র কিংবা অসহায়। আপনার মনে হচ্ছে আমি তার উপর জুলুম করছি কিন্তু হয়তো হতে পারে আমি যখনই রেগেছি ঠিক তখনি আপনি দেখেছে তার আগের ঘটনা দেখেন নি। আপনি জানেন না যে ঐ সময় তার সাথে এমন ব্যবহারটায় হয়তো যুক্তিযুক্ত ছিলো কিংবা সে অন্যায় করেছে যার প্রতিবাদ করছিলাম কিন্তু আপনি দূর থেকে দেখে বিচার করে নিলেন আমি খুব খারাপ কিংবা জুলুমকারী।
কিংবা হঠাৎ আপনি দূর থেকে দেখলেন আমি কোনো একজন মেয়ের সাথে রিক্সায় কোথাও যাচ্ছি কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না সে হয়তো আমার আপন বোন ছিলো কিংবা খুব কাছের কোনো আত্মীয় ছিলো কিন্তু আপনি না জেনে বা না বুঝে নিজের মত ভেবে বিচার করে নিলেন যে এই ছেলেটাও দেখি মেয়ে নিয়ে ঘুরাফেরা করে বকাটে ছেলেদের মত। এক পলকেই আমার সম্পর্কে ভালো ধারনাটা বদলে গেলো।
কোনো একটা মেয়ে যাকে আগে কখনো দেখেন নি কিন্তু হঠাৎ একদিন সে তার ভাই এর সাথে মার্কেটে গেলো শপিং করতে কিংবা ভাই তারে কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলো আপনি তাকে দেখে যাতা ভেবে নিলেন অথচ আপনি তার সম্পর্কে কিছুই জানে না। এ সমাজে ছেলে মেয়ে এক সাথে ঘুরাফেরা মানেই অনৈতিক প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক যেখানে ভাই বোনের পবিত্র সম্পর্কও অপবিত্র হয়ে যাচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গির কারনে। শুধু উপরের চর্ম চোখে দেখেই কাউকে বা কিছু বিচার করা যায় না।চর্ম চোখের ভালো লাগাতে কারো প্রেমে পড়া যায় কিন্তু ভালোবাসা যায় না।ভালোবাসতে হলে তাকে সময় নিয়ে জানতে হয় চিনতে হয় বুঝতে হয়।সব কিছু জেনে বুঝেই তাকে কাছে টানতে হয়। তবেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী ও মধুর হয়।
হ্যাঁ কাউকে প্রথম দেখাতে ভালো লাগতেই পারে বা প্রেমে পড়াটায় যে স্বাভাবিক। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পরেছি বলে একটা কথা আছে যাকে ইংরেজিতে বলে “Love at first sight”
কিন্তু সে প্রেমটা আস্তে আস্তে জানার বা চেনার সাথে সাথে অন্য এক নতুন মাত্রায় রূপ নিবে। হতে পারে সেটা খুবই মধুর, হতে পারে খুবই তিক্ত। এটা নির্ভর করবে দুজনের পছন্দ অপছন্দ, মিল অমিল, ভালো লাগা মন্দ লাগার উপর। কতটা-ই স্থায়ী বা মধুর হবে যতটা আপনার সাথে মিলবে কিংবা আপনি যেমনটা প্রত্যাশা করছিলেন সে রকম হলে।
কারন উপরের সৌন্দর্যটা বেশি দিন ভালো রাখতে পারে না। যখন পছন্দ অপছন্দ ব্যক্তিত্বের সাথে দ্বিধা দ্বন্দ্ব শুরু হবে তখন মহাপ্লাবন ধেয়ে আসতে শুরু করবে। নিজের সুখের রাজ্যটা কালো মেঘে ঢেকে অন্ধকার হয়ে আসতে থাকবে ।
যে কোনো মানুষের ক্ষেত্রে; যদি ভালো লাগে তাহলে তাঁর কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করুন তাঁর পছন্দ অপছন্দ জানুন তাঁর ভালো মন্দ জানুন তারপর তাঁর সব কিছু জেনে শুনে বিচার করতেই পারেন। সে যেই হোক পরিচিত অপরিচিত, সদ্য প্রেমে পড়া প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা।
এবার বিচার করে নিজেই দেখুন তাঁর ভালো মন্দ পছন্দ অপছন্দ, রুচিবোধ মননশীলতা। তাঁর মন্দগুলো কি মানতে পারেন কি না তাও দেখুন। উপরের সৌন্দর্য আর ভিতরের সৌন্দর্য এক নই। উপরের সৌন্দর্য চর্ম চোখে দেখা যায় কিন্তু ভিতরের সৌন্দর্য বা কুৎসিত চর্ম চোখে হয়তো দেখা যায় না তবে কালের বিবর্তনে তা ক্রমে ক্রমে তা জানা যায়।তাই সবাইকে এক পলকে বিচার বিশ্লেষণ না করে তাকে নিয়ে একটু ভাবুন,তার সাথে মেলামেশা করেন,তার সম্পর্কে জানুন,তাকে বুঝবার চেষ্টা করেন,তার স্বপ্নগুলো জানুন দেখবেন আগের ও বর্তমান ভাবনার মধ্যে কিছুটা হলেও পার্থক্য রয়েছে।

লেখক:
মোঃ জুনায়েদ আল হাবিব
ইংরেজি বিভাগ,চতুর্থ বর্ষ,কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
error: ধন্যবাদ!