স্বকৃত গালিব,কুবি প্রতিনিধি :
করোনায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রায় দুইমাস আগেই ক্যাম্পাস ছেড়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সকল শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেছে টিউশন করে উপার্জন করা শিক্ষার্থীদের আয়ের পথ। কিন্তু বন্ধ হয়নি মেস ভাড়া। উপার্জনহীন এমন হাজারো কুবির ব্যাচেলর এখন রীতিমতো অসহায় মেস ভাড়া চাওয়া মালিকদের কাছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ছয় হাজার।ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের চারটি আবাসিক হল মিলিয়ে মোট এক হাজার পঞ্চাশ জন শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা রয়েছে ক্যাম্পাসে। সে হিসেবে মাত্র ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ব্যবস্থা করতে পেরেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সে হিসেবে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী শহর ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভাড়া বাসায় থাকেন। এসব শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত পরিবারের হওয়ায় বিভিন্ন টিউশন বা পার্ট টাইম জব করে নিজের ও পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে টিউশন ও জব বন্ধ হয়ে যায়। আয়হীন অনেক শিক্ষার্থীই পরিবার নিয়েও হিমশিম খাচ্ছেন।অনেকে আবার ধার-দেনা করে এক মাসের বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করেছেন।
কিন্তু এসব কথা শুনতে নারাজ বাড়ির বা মেস মালিকরা।কেউই ছাড় দিচ্ছেন না এক মাসের ভাড়াও। তাদের কথা হচ্ছে যেহেতু তারা বাসা ভাড়া নিয়েছে না থাকলেও ভাড়া দিতে হবে।অনেক মালিক আবার ভাড়া পরিশোধ করতে না পারলে বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন।তাছাড়া কিছু বাড়ির মালিকের কাছে মেস ভাড়া মওকুফ বা কমানোর দাবি জানিয়ে রীতিমতো হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীকে।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা মেস ভাড়া মওকুফ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্থক্ষেপ চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মে মাসের ১৭ তারিখে ভিসি অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীরর নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের স্বাক্ষরিত “করোনার সময়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া মওকুফের প্রসঙ্গে” এই শিরনামে কুমিল্লা- ৬ আসনের সংসদ সদস্য আ. ক. ম বাহাউদ্দিন বাহার, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার এবং সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মিয়া মোহাম্মাদ কেয়ামউদ্দিনের নিকট এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।
কিন্তু মাসের পর মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে এখনো কোন ঘোষণা বা আশ্বাস পায়নি মেসে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন জয় অভিযোগ করে বলেন, আমাদের মেসের ১১ জন মেম্বারের প্রায় সকলেই টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতেন।বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, তাই টিউশন ও বন্ধ।কিন্তু বন্ধের পরে প্রথম মাস থেকেই বাড়ির মালিক ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।আমরা ভাড়া একটু কমানোর জন্য বললে উনি খুব বাজে ব্যাবহার করেন।
তাছাড়া ভাড়া দিতে না পারলে দুই মাসের পুরো ভাড়া পরিশোধ করে বাসা ছেড়ে দিতে বলেন।এই মূহুর্তে নিজের পরিবার কে নিয়ে চলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই মেস ভাড়া পরিশোধ করা একপ্রকার অসম্ভব। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন,মেস মালিক গণ নিয়মিত মেস ভাড়ার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
কোন কোন শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে মেস ভাড়া ধার কর্য করে দিচ্ছে।আবার কোন কোন শিক্ষার্থী মেস ভাড়া না দিতে পেরে মেস মালিকদের বিশ্রী ব্যাবহার এবং হুমকি শুনে থাকছে।আর এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যত কোন পদক্ষেপ না দেখতে পেরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হতাশা ব্যাক্ত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের করোনার সময়ে কমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া মওকুফের প্রসঙ্গের চিঠির বিষয়ে চানতে চাইলে বলেন “ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া মওকুফের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। মেসের ঠিকানা, মালিকের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করছি ও স্থানীয় সরকারের লোকজনের সাথে কথা বলে একটি সুষ্ঠ সমাধান করব।