মাজহারুল ইসলাম বাপ্পি :
পরিবেশ বান্ধব, বজ্রপাত-জীববৈচিত্র রক্ষা ও মাটি ধরে রাখার সহায়ক হিসেবে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা ইউনিয়নের যশপুর রুইতা খাল পাড়ে ২’শ তাল গাছের চারা রোপন করা হয়।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস কর্তৃক রবিবার (১ আগস্ট) গ্রামীণ সড়কের পাশে তাল গাছ রোপন এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। তাল গাছের চারা রোপন কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভাশিস ঘোষ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাবলু, সদর দক্ষিণ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান, চৌয়ারা ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মতিউর রহমান, চৌয়ারা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুর রব প্রমুখ।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভাশিস ঘোষ বলেন,পরিবেশ বান্ধব, বজ্রপাত-জীববৈচিত্র রক্ষা ও রাস্তার মাটি ধরে রাখার সহায়ক হিসেবে তাল গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমান পরিকল্পনায় নেয়া হয়েছে গ্রামীণ সড়ক ও খালের দুই পাশে তাল গাছ রোপন প্রকল্প। তাল গাছ রোপনের ফলে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
এ আধূনিক যুগে এসে জলবায়ু পরিবর্তন সহ নানা বিবর্তনে গ্রাম বাংলার তাল গাছ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কের পাশে পরীক্ষামূলক তাল গাছের চারা রোপন করে ব্যাপক সাফল্য দেখতে পায়। এদিকে তালের চারা রোপনের মধ্য দিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীর স্বতঃস্ফুর্ত অংশ গ্রহন এবং নিজেদের জমিতেও তাল গাছের চারা রোপনে উদ্যোগী হবে এমনটাই প্রত্যাশা।
এ ব্যাপারে সদর দক্ষিণ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান জানান, পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি দেখতেও অনেক সুন্দর। তাল গাছের সকল লাভের অংশ বাদ দিলেও গাছ যখন পরিপূর্ণ হবে তখন গ্রামীণ সড়কের দু’পাশের সারি সারি তাল গাছের সৌন্দর্য ও আর দেশী নানা পাক-পাখালি’র কলতানে মন ভরে যাবে। ফিরে আসবে গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্য রূপ। আর তখন ওই গ্রামে এসব দৃশ্য দেখতে ছুটে আসবে শহরবাসী ও ভ্রমন বিলাসীরা।
উল্লেখ্যঃ বর্তমানে উৎপাদিত একটি তাল গাছ পরিপূর্ণ হতে বা গাছে তাল ধরতে সময় নেয় ৮ থেকে ১০ বছর। এরপর নিয়মিতভাবে প্রতিবছর তাল ধরতে থাকবে। এ সময়ের মধ্যে কোন রকম সার বা কিটনাশকের প্রয়োজন হয়না। তাল গাছ রোপনে কোন খরচ নেই। যে কোন সড়কের ঢালুতে মাটি খুড়ে তাতে সামন্য কিছু গোবর সার ছিটিয়ে চারা রোপন করা যায়।
তবে চারা রোপনের পরপরই পানির সঙ্গে সামন্য কিটনাশক ছিটিয়ে দিলে নানা ধরণের পোঁকার আক্রমন থেকে রক্ষা পাবে এবং চারাগুলো দ্রুত বর্ধনশীল হবে। বর্তমানে সারাদেশে তাল গাছের সংকট থাকায় এবং তালের চাহিদা বিশেষ করে অপরিপক্ক কাঁচা তালের শাঁস বা বীচি’র ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে তাল গাছের কদর আরো বাড়বে বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাল গাছ পরিবেশ বান্ধব পাশাপাশি মাটির ভাঙন রোধ করে, বিশেষ করে সড়কের পাশের মাটি বর্ষা বা বন্যার পানিতে শত ভাঙনের মুখেও রাস্তা ভাঙন রোধ করে তাল গাছের শিকড়। এছাড়া তাল গাছে বিলুপ্ত প্রায় বাবুই পাখিসহ নানা প্রজাতির পাখি আস্তানা গড়ে উঠে।
সবচেয়ে লাভের বিষয় হলো অনেকটা অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠা এই তাল গাছ থেকে পাকা তালের পাশপাশি বর্তমানে অপরিপক্ক বা কাঁচা তালের বীচি বা শাঁসের ব্যপক চাহিদা হয়ে উঠেছে। একটি তাল গাছে যে পরিমানের তাল ফলন হয় তাতে বছরে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার তালের শাস বিক্রি করার পর আরো কয়েক হাজার টাকার পাকা তাল বিক্রি করা সম্ভব বলে জানা যায় ।