হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে গোমতীর ২৯ পয়েন্টে অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে কুমিল্লা গোমতীর ২৯টি পয়েন্টে থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন মোবাইলকোর্ট করে জেল জরিমানা ও ড্রেজার মেশিন আটক করেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না।

কৃষকের ফসলী জমি কেটে নিয়ে যাচ্ছে বালু ও মাটি ব্যবসায়ীরা। এতে ক্ষদিগ্রস্ত কৃষকরা প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেসার্স এম রহমান এর সত্বধীকারি মাহাবুবুর রহমান ৫টি ঘাট ইজারা নিয়ে ২৯ পয়েন্টে ঘাট বানিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

এর মধ্যে মেসার্স রিফাত কনস্ট্রাকশন নদীর চতুর্থ খন্ড শ্রীপুর ও শুভপুর ঘাটের ইজারা নিয়ে সরকার ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের বিধি অনুযায়ী বৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এ ঘাটটিও দখল করার চেষ্টা করছে এমন অভিযোগ এনে মেসার্স এম রহমান এর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করে মেসার্স রিফাত কনস্ট্রাকশন এর সত্বাধিকারি আরফানুল হক রিফাত। তিনি বলেন, মেসার্স এম রহমান এর বৈধ কাগজপত্র না থাকায় হাইকোর্ট ১৯ জুলাই স্থিতি আদেশ দেন। হাই কোর্টের ওই আদেশ অমান্য করে মেসার্স এম রহমান ২৯ টি ঘাট থেকে অবৈধভাবে বালু ও মাটি কেটে নিচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন ইজারা পাওয়া মেসার্স এম রহমান এর বৈধ কোন কাগজপত্র নেই, আরকর সার্টিফিকেট ও ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কিভাবে বালু মহাল ইজারা পায়।

গোমতী নদীর কুমিল্লা সদর উপজেলার বিভিন্ন অংশে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে তা নদীর চরের ফসলি জমিতে স্তুপ করায় ক্ষতি ক্ষতির মুখে পড়ছে কৃষক। এধরণের ঘটনায় গোমতী বালু মহাল সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ, মানববন্ধন এবং জমি ও ফসল রক্ষার প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করছেন কৃষকরা।

সংবাদ সম্মেলনে আরফানুল হক রিফাত বলেন, আমি মেসার্স রিফাত কনস্ট্রাকশন, মুন্সেফবাড়ি, কুমিল্লা এর সত্বাধিকারি। আমি আমার প্রতিষ্ঠানের নামে গত ১১ জুন ২০২০ তারিখের নোটিশে, ১৪২৭ বাংলা সনের কুমিল্লা গোমতী নদীর বালুর মহাল ইজারার দরপত্রে অংশগ্রহণ করি। আমার প্রতিদ্বন্ধী মেসার্স এম. রহমান, মালিক- মাহবুবুর রহমান, সর্বোচ্চ দর দাতা। ভ্যাট+ট্যাক্স সহ ১,৫৬,০০,০০০/- (এক কোটি ছাপ্পান্ন লক্ষ) টাকার ভিট প্রদান করেন। আমি ২য় দর দাতা ছিলাম। বিগত কয়েক বৎসর আমি সরকারি বিধি মোতাবেক ভ্যাট+ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স সহ আমার প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত নবায়ন করিয়া ইজারাতে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু মেসার্স এম.রহমান, মালিক- মাহবুবুর রহমান সর্বপ্রথম তার বিগত ৩/৪ বৎসরের কোন ট্রেড লাইসেন্সের নবায়ন করেনি। তার স্বপক্ষে সিটি কর্পোরেশন, কুমিল্লা একটি প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন। দ্বিতীয়ত ২০১৪ সাল থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত আয়করের কোন রীটার্ন বা কর প্রদান করেনি।

তিনি জানান, তার স্বপক্ষে কুমিল্লা কর কমিশনার প্রদত্ত প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন। তাহার এই ইজারায় অংশগ্রহণ করা ২০১১ সালের বিধিতে ৯ (৪) এর ধারায় অযোগ্য। গত ২০ জুন ২০২০ তারিখে টেন্ডার ওপেনিং এর পর মৌখিক ও পরে লিখিত অভিযোগ করি। তার সিডিউলটি অবৈধ ঘোষনা করার জন্য। কিন্তু জেলা প্রশাসক কার্যালয়েল বালুর মহালা ইজারা কমিটি কোন ওজরাপত্তি না শুনিয়া তাহাকে প্রথম দর দাতা হিসেবে বিবেচিত করে। কিন্তু আমার দৃষ্টি কোণে তারা টেন্ডার আইনের পরিপন্থি কাজ করিয়াছে। পরবর্তীতে আমি মহামান্য হাইকোর্টের স্বরনাপন্ন হই।

মহামান্য হাইকোর্ট ১৯ জুলাই ২০২০ তারিখে এই ইজারা সংক্রান্তের উপর সকল কার্যক্রম স্থিতিবস্থার জন্য আদেশ দেন। যাহার নং- ভিসি, রীট পিটিশন- ২৫০/২০২০ইং। যাহা অদ্যবদি পর্যন্ত বহাল আছে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে, একটি বিশেষ মহালের উপর ভর করিয়া মেসার্স এম.রহমান, মালিক- মাহবুবুর রহমান, নতুন চৌধুরী পাড়া, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা। গোমতী নদীর বালুর মহালের বিভিন্ন ঘাট দখল করার চেষ্টা ও পায়তারা করিতেছে।

রিফাত বলেন, গত ০৬/০৮/২০২০ইং তারিখে জেলা প্রশাসকের কার্যলয় হইতে আর.ডি.সি মাহফুজা মতিন স্বাক্ষরিত স্থিতিবস্থা বজায় রাখার জন্য মেসার্স এম.রহমান, মালিক- মাহবুবুর রহমানকে পত্র প্রদান করেন। কিন্তু স্থিতিবস্থা অদ্যবদি পর্যন্ত ভঙ্গ করিয়া আসিতেছে। তার ইজারা অংশগ্রহণ করার বিশাল অংকের ভিট মানি (আয়কর বিহীন) কোথায় থেকে আসে তা খতিয়ে দেখার জন্য আমি আরফানুল হক রিফাত সকল ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক ভাইদের প্রতি অনুসন্ধান পূর্বক প্রতিবেদন প্রনোয়নের জন্য সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আরফানুল হক রিফাত জানান, কুমিল্লা বালুর মহালের ৬টি অংশের ভিতরে ৫টি অংশই যথাক্রমে- ১, ২, ৩, ৫ ও ৬নং ঘাট দখল করার জন্য মোট ২৬টি ঘাট নতুন করে তৈরি করে। যাহাতে দখলের জন্য জামায়াত ও বিএনপি জোট লোকদের বিভিন্ন ভাবে ১০/১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দখল দেওয়ার চেষ্টা করতেছে।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, ইজাদারদের বালু উত্তোনের জন্য ইজারা দেওয়ার সময় যে সকল নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো না মেনে বালু উত্তোলন করলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষকদের ফসলি জমি বিনষ্ট হতে পারবে না।

সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, পাচথুবী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান রাফি রাজু, ১৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাউন্সিলর মোঃ সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি শাহাজাদা টুটুল।

সাংবাদিক সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্ন রেখে বক্তব্য রাখেন, ইনকিলাব কুমিল্লা প্রদিনিধি সাদিক হোসেন মামুন, আমাদের কুমিল্লা শাহাজাদা এমরান, সাংবাদের জাহিদুর রহমান।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!