সম্মেলনের ১১ মাসের মাথায় নতুন নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছেন নগরের চার শীর্ষ নেতা। দলীয় সভানেত্রী নিজস্ব টিমে এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে খসড়া তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন। দলের দুঃসময়ে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে যে কোনো সময় এই কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে ঢাকা মহানগর উত্তরে শেখ বজলুর রহমান সভাপতি ও এস এম মান্নান কচি সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণে আবু আহমেদ মন্নাফী সভাপতি ও হুমায়ুন কবির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্মেলনের পর ঢাকা দুই সিটি নির্বাচন, ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচন এবং করোনার কারণে এতদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। গত সেপ্টেম্বর মাসে খসড়া তালিকা জমা দেয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। আর মার্চ মাসে ঢাকা মহানগর উত্তর একটি খসড়া তালিকা জমা দিলেও সেখানে ভুলত্রুটি থাকায় সে তালিকা ফেরত দেওয়া হয়। এরপর আবার সংযোজন-বিয়োজন করে গত মাসে খসড়া তালিকা জমা দেয় ঢাকা মহানগর উত্তর।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটিতে ৭১ সদস্যের মধ্যে ৬৯ ছিল। এর মধ্যে চার নেতা মারা গেছেন। বেশ কয়েকজন অসুস্থ। কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করে অর্থবিত্তের মালিক হওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সব মিলে ২৬ জনকে গত কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক কমিটির প্রায় ২০ নেতাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সাবেক ছাত্রনেতা ১/১১ দলের দুঃসময়ের কর্মীদের প্রাধান্য দিয়ে ৭৫ সদস্যের খসড়া তালিকা করা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ‘মাইম্যান’ রাখার অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নিজস্ব টিম ও কয়েকটি সংস্থায় খসড়া তালিকায় থাকা নেতাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। যাচাই-বাছাই শেষ হলেই কমিটি ঘোষণা করা হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রথম আমরা করোনার আগে এক দফা কমিটি জমা দিয়েছিলাম। ওই কমিটিতে কিছু সংশোধনী এনে দলের হাইকমান্ড আমাদের ফেরত পাঠান। পরে আবার সংযোজন-বিয়োজন করে কমিটি জমা দিয়েছি। ঢাকা দুই মহানগর একসঙ্গে কমিটি দিলে এবং কোনো কারণে দেরি হলে ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনের পর অর্থাৎ ১২ নভেম্বরের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হতে পারে। জানা গেছে, খসড়া তালিকা ছাড়াও যারা আগামী দুই মহানগরের নেতৃত্বে আসতে পারেন, তাদের সবার বায়োডাটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে। তার ইঙ্গিতেই কমিটির নেতৃত্ব নির্ধারণ হবে। তিনি ইতিমধ্যে নেতাদের বিগত দিনের আমলনামা সংগ্রহ করে বিতর্কিত, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত ও অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করে তাদের দল থেকে বিদায় করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুই মহানগরের যে খসড়া তালিকা জমা পড়েছে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ শেষে কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা গত সেপ্টেম্বর মাসে কমিটি জমা দিয়েছি। দলের সাধারণ সম্পাদক কিছু নাম নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন। এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি যাচাই-বাছাই পর্যায়ে আছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিটি দেখে চূড়ান্ত অনুমোদন দিলেই আমরা ঘোষণা করব। পদপ্রত্যাশী নেতা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক প্রচার সম্পাদক আকতার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসন্ন কমিটিতে যেন ১/১১ দুর্দিনে যারা নেত্রীর পাশে ছিল সেই লোকগুলোর মূল্যায়ন হয় এটাই বড় চাওয়া। পরীক্ষিত নেতা-কর্মীরা পদ পেলে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে ভূমিকা রাখবে।’
আরেক পদপ্রত্যাশী নেতা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক রানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। শুনেছি দুই মহানগরের শীর্ষ নেতারাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে জমা দিয়েছেন। নতুন নেতৃত্ব সংগঠনকে আরও বেশি চাঙ্গা ও সক্রিয় করবে বলে আশা রাখি। যারা পদে আসবেন তারা নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করবেন।’
বিডি প্রতিদিন