কুমিল্লার দেবিদ্বারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে জামাল হাজারী (৩৬) নামের এক মুদী ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকায় নেয়ার পথে উপজেলা সদরের অদূরে চান্দিনা রোডে তার মৃত্যু হয়। ওই ব্যক্তি দেবিদ্বার পৌর এলাকার চাঁপানগর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে ওই ব্যক্তি গত মঙ্গলবার (৫ মে) দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বিকালের দিকে তার করোনা পজেটিভ ফলাফল আসে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: আহম্মদ কবীর।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আইইডিসিআর থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে এ উপজেলায় আরও ৯ জনের করোনা পজেটিভ ফলাফল আসে। সদ্য মৃত জামাল হাজারী তাদেরই একজন। এ নিয়ে এ উপজেলায় একজন উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ও পুলিশ সদস্যসহ করোনায় পজেটিভ হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১ জনে। এছাড়াও এ পর্যন্ত একজন হোমিও চিকিৎসক, ২ জন ব্যবসায়ী ও ইউপি সদস্যসহ মারা গেছেন ৪ জন।
রাতে মৃত জামাল হাজারীর ভাগিনা বাছির মুঠো ফোনে জানান, গত মঙ্গলবার জ¦র, গলা ব্যথা ও শ্বাস কষ্ট থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার মামার করোনার নমুনা দেয়ার পর বাড়িতে চলে যান। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তার মামার শারীরিক অবস্থার দ্রæত অবনতি ঘটে। তখনো করোনার রিপোর্ট হাতে আসেনি, তখন তাকে একটি এ্যাম্বুলেন্সযোগে কুমিল্লায় নেয়ার পথে বিকালের দিকে করোনা পজেটিভ ফল আসার খবরে দেবিদ্বারে ফিরে আসতে চায়। কিন্ত পথেই চালক তার করোনা পজেটিভ আসায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। আমরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর কোন এ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় যেতে রাজি হয়নি। পরে ডাক্তারদের সহায়তায় ঢাকা থেকে এ্যাম্বুলেন্স আসার পর রাত ৯টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেও উপজেলা সদরের অদূরেই তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, ‘দুপুরের দিকে তার মামাকে (জামাল হাজারী) হাসপাতালে আনার আগে ফেসবুকে তার করোনার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে এমন খবর পেয়ে এলাকার অনেক লোক তাকে দেখতে আসে, কিন্তু ওই মিথ্যা অপপ্রচারের জন্য আজ অনেক লোকের জীবনই হয়তো ঝুঁকিতে পড়ে গেল। মৃত জামাল হাজারীর ৩ কন্যা সন্তান রয়েছে।
রাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রাকিব হাসান জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কিছু পিপিই মৃত জামাল হাজারীর গ্রামে পাঠানো হয়েছে, স্বল্প পরিসরে জানাজা শেষে রাতেই তাকে দাফন করা হবে। শুক্রবার সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন ওই গ্রামে গিয়ে সম্ভাব্য স্থান ও ঘর-বাড়ি লকডাউন করবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেবিদ্বারে ১৪৪ ধারা জারীর বিষয়ে ফেসবুকে প্রচারণা প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, এমন সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, মানুষের চিন্তা-চেতনা কতো কম,ভাবতে অবাক লাগে যখন দেখি কেউ ১ কেজি আলুর জন্য বাজারে ঘুরে বেড়ায়। নিজের পরিবারসহ সকলের মঙ্গলের জন্যই সকল কে লকডাউন মেনে ঘরে অবস্থান করার জন্য বার বার অুনরোধ করে যাচ্ছি। ২ জন ম্যাজিষ্ট্রেট, উপজেলা প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী, ২০/২২ জন পুলিশ এবং কিছু জনপ্রতিনিধি নিয়ে উপজেলার লাখ লাখ লোককে নিরাপদে রাখতে আমরা দিবা-রাত্রি প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচিচ্ছ, যা সত্যই কঠিন কাজ।তাই সকলের উচিত সরকারের স্বাস্থ্য বিধি মেনে অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাহিরে বের না হওয়া।
এদিকে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে নতুন ১৪ জনসহ এ জেলায় এ পর্যন্ত ১২২ জনের করোনা পজেটিভ ফলাফল এসেছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। এর মধ্যে ৪ জনের বাড়িই জেলার দেবিদ্বার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।