এমপি দুর্জয়ের স্ত্রীর নামে সম্পদের পাহাড়!

মানিকগঞ্জের ঘিওর-দৌলতপুর ও শিবালয় উপজে’লার সর্বত্রই চলছে সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের স্বজনদের বেপরোয়া দ’খলবাজি। তাদের আগ্রাসী থাবা থেকে সরকারি সম্পত্তি, খাস জমি, খাল-বিল এমনকি ব্যক্তি মালিকানার জায়গা জমি, ভিটে মাটি কোনো কিছুই রেহাই পাচ্ছে না।

কোথাও তা দ’খল করে নিজেদের নি’য়ন্ত্রণেই নিয়ে নিচ্ছে আবার কোথাও কোথাও সে দ’খলবাজির জমি পজেশন আকারে হস্তান্তর করা হচ্ছে। আর এই জায়গা জমি হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে এমপি দুর্জয় পত্নী ফারহানা রহমান হ্যাপীর নামেও। এভাবেই তার নামে গড়ে উঠেছে অ’বৈধ সম্পদের পাহাড়।

এমনই অ’ভিযোগ উঠেছে সাবেক ক্রিকেটার, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক এমপি নাইমুর রহমান দুর্জয় এবং তার স্ত্রীর বি’রুদ্ধে। আরও অ’ভিযোগ আছে, জমি দ’খলের পুরো কাজটি দুর্জয়ের হয়ে নি’য়ন্ত্রণ করেন তারই চাচা এবং মানিকগঞ্জ জে’লা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তায়েবুর রহমান টিপু।

দুর্জয় বা’হিনীর জমি দ’খলের বিষয়টি এখন মানিকগঞ্জ জুড়ে ‘ওপেন সিক্রেট’। জে’লায় কেউ জমি কেনাবেচা করতে চাইলে আগেই ‘ভাগ’ রেখে দিতে হয়। আর যারা ভাগ দেন না, তারা জমি কেনাবেচা করতে পারেন না। আর বেশি ঝা’মেলা করতে চাইলে সেই জমি চলে যায় দুর্জয়ের দ’খলে।

পরিচয় গো’পন রাখার শর্তে স্থানীয় প্রশা’সনের একাধিক সূত্র জানায়, দ’খল ভী’তির কারণে জে’লার বাইরে থেকে কোনো ব্যক্তি বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ওই এলাকায় জমি কিনতে আসে না। সে কারণে জমি কেনাবেচাও খুবই কম। আর বাংলাদেশ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং সড়ক ও জনপথের মতো সংস্থার সরকারি জমি এবং নদীভা’ঙা সম্পদ, বাজার বা অন্যান্য খাস জমি দ’খলে নেওয়া তো এমপির লোকজনের নিত্যদিনের ব্যাপার।

ভূমি অফিস ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দুর্জয় এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত পাঁচ ছয় বছরে শুধু দৌলতপুর এলাকাতেই শতাধিক একর খাস জমি দ’খল করে নিয়েছেন। উপজে’লা সদরের খাল-নালা ভরাট করে তা পজেশন আকারে বিক্রি করার ঘটনাও ঘটেছে। দৌলতপুর বাজারে জে’লা প্রশা’সনের নি’ষেধাজ্ঞা অমান্য করেই সরকারি নালা দ’খল করে ভরাট হয়েছে, সেখানেই এখন গড়ে উঠেছে বড় আকারের মার্কেট।

দোকান প্রতি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ‘পজেশন’ বরাদ্দও দিয়েছেন টিপু। একইভাবে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় বিআইডব্লিউটিএর কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে টিপুর বা’হিনী। সেখানে এখন শতাধিক দোকানপাটের জন্য পজেশন বরাদ্দের পাঁয়তারা চলছে।

জাফরগঞ্জ নৌবন্দর সংলগ্ন যেসব জায়গা জমি কয়েক বছর আগে যমুনাগর্ভে বিলীন হয়েছিল অ’দৃশ্য কাগজপত্রের সাহায্যে সেসব জায়গার মালিক সেজেছেন এমপির চাচা টিপু। স্ট্যাম্পে লিখিত দেওয়ার মাধ্যমেই নদীর সেই জায়গা বেচাকেনাও করা হচ্ছে বলে অ’ভিযোগ উঠেছে।

অ’ভিযোগ আছে, জমি দ’খলের মহড়ায় যুক্ত আছেন এমপিপত্নী ফারহানা রহমান হ্যাপি। তরা-মুলজান শিল্পাঞ্চলের অনেক জায়গা জমি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে হ্যাপীর নামেও। তার নামে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন সড়ক ও জনপথের বহু দামী জায়গা হাতিয়ে নেওয়ারও অ’ভিযোগ পাওয়া গেছে।

মূলজান এলাকায় এই জমিতেই হ্যাপির নামে দুর্জয় পরিবারের শপিং মল তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা যায়। এমপির স্ত্রী হওয়ায় জমি পুনরু’দ্ধারে অনেকটাই হ’তাশ সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

তরা ক্রসব্রিজ থেকে মানিকগঞ্জ সদর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার মহাসড়কের অন্তত চারটি পয়েন্টে অন্তত পাঁচ একর জায়গা দ’খল করা হয়েছে। সেসব স্থান কাঁ’টাতারের বেড়া দিয়ে আলাদা সীমানা করে দেওয়া আছে।

এছাড়া কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করারও অ’ভিযোগ আছে হ্যাপির বি’রুদ্ধে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মেগা ফিড কারখানার পেছনে অন্তত তিনটি স্পটে ফসলি জমি দ’খল করে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। সেই মাটি আনা-নেওয়ার কাজে ট্রাক চালিয়ে ক্ষ’তি করা হচ্ছে আশেপাশের ফসলি জমির।

অ’ভিযোগ আছে, এভাবেই স্ত্রীর নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। প্রথম দফায় এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতি বছর গড়ে দুর্জয়ের আয় বাড়ে প্রায় ৮ গুণ। এর বাইরেও, স্ত্রী, চাচা এবং পরিবারিকভাবে সম্পর্কিত অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের নামে-বেনামে অ’বৈধ সম্পদ রেখেছেন তিনি।

অবশ্য নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায়, স্ত্রী ফারহানা রহমান হ্যাপির নামে যথাযথ কোনো আয়ের উৎস দেখাতে পারেননি দুর্জয়। অ’ভিযোগ আছে, অ’বৈধভাবে অর্জিত এই সম্পদ বিদেশে পা’চার করে দুজন মিলে মালয়েশিয়ায় গড়েছেন ‘সেকেন্ড হোম’।

এসব অ’ভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অবশ্য সেগুলো অ’স্বীকার করেন দুর্জয়ের চাচা তায়েবুর রহমান টিপু। আরিচা ও পাটুরিয়া এলাকায় জায়গা জমি নিয়ে দলীয় কর্মীদের মাঝে থাকা বি’রোধ তিনি ‘মিটিয়ে দিয়েছেন মাত্র’ বলে দা’বি করেন। তবে হ্যাপির নামে থাকা জমি দিয়ে তিনি কি করবেন সে বিষয়ে অন্য কারও ‘মাথা ব্য’থার’ কারণ দেখেন না বলেও জানান টিপু।

আর সম্পদের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেখবে বলে জানান সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়। অন্যদিকে তার নাম ব্যবহার করে কেউ যদি অন্যায় কাজ করে তাহলে তাদের নাম পরিচয় জানতে চেয়েছেন তিনি। অ’ভিযোগ পেলে নিজেই ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার দা’বি করেন।

দুর্জয় বলেন, আয়ের উৎস তো এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) দেখবে। এনবিআর দেখুক আয়ের উৎস, আয়ের টাকা কই গেল? আর মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অ’ভিযোগের সূত্র সম্পর্কে জানতে চান।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
error: ধন্যবাদ!