শেষ দিনে ব্যস্ত সময় পার করছে মুরাদনগরের কামার পল্লী

আরিফ গাজী।।

রাত পোহালেই ঈদ টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেরার কামার পল্লী গুলো। কোরবানির পশু জবাই ও গোশত প্রস্তুতে ব্যবহৃত দা, বঁটি, ছুরিসহ প্রয়োজনীয় অন্য সব উপকরণ তৈরিতে এখন দিনরাত কাজ করছেন শ্রমিকরা।

দম ফেলারও যেন সময় নেই তাদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন সকলে। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। বিরামহীনভাবে জ্বলছে কামার দোকানের চুলার আগুন। আগে যে সব দোকানে দুজন করে শ্রমিক কাজ করত, এখন সে সব দোকানে ৫-৬ জন করে শ্রমিক কাজ করছেন।

উপজেলার বিভিন্ন বাজারের কামার পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে টুং টাং শব্দ। কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন দগদগে লাল লোহার খন্ড, আবার কেউ শান দিচ্ছেন ছুরি কিংবা বঁটি, কেউবা আবার কয়লার আগুনে বাতাস দিচ্ছেন। কোরবানির সময় তাদের আয় বেড়ে যায় কয়েকগুন। সারা বছর এই সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকেন তারা।

কামার শীল্পে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির এক মাস আগে থেকেই পশু জবাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। এছাড়া বছরের অন্য সময় বিল্ডিং তৈরির হ্যান্ডেল, হাতুড়িসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরিতে তারা ব্যস্ত থাকেন।

কামাররা জানান, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২০০, দা ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বটি ২৫০ থেকে ৫০০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে যেমন অভিযোগ রয়েছে তেমনি কাচামালের উর্ধ্বগতি ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিও নানান অজুহাতও রয়েছে বিক্রেতাদের।

ক্রেতা আবু কাইছার বলেন, আমি একটি চাপাতি ৫০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। এ ছাড়া আমাদের এলাকার ছুরি, দা, জবাই করার ছুরিসহ প্রায় ৭টি জিনিস রিপেয়ারিং করার জন্য এসেছি। ঈদ উপলক্ষে কামাররা মজুরি অনেক বেশি নিচ্ছে।

কামার শিল্পীদের কাছে বটি ক্রয় করতে আসা জোনায়েদ বক্তার জামান জানান, কুরবানির ঈদের সময় কসাই পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই একটা নতুন বটি কিনেছি, আর পুরনো চাপতি, দা শাণ দিয়ে নিচ্ছি নিজেরাই কাজে লেগে যাব। তিনি বলেন, গেল বছরের চেয়ে এ বছর পুরনো জিনিস শাণ দিতে মানভেদে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি।

উপজেলা সদরের চন্দন কর্মকারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ঈদকে সামনে রেখে প্রায় এক মাস আগে থেকে পশুর মাংস কাটার সরঞ্জাম তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। লোহার গুণগত মানের উপর ভিত্তি করে দা-চাপাতি ছুরি বিকিকিনি হয়। লোহার মধ্যে ক্রেতাদের পছন্দ জাহাজ ভাঙ্গা ও বাসের স্প্রিংয়ের লোহার ছুরি-চাপাতি। তবে আগের তুলনায় লোহার দাম বেড়ে যাওয়া ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে তাদের কাংখিত মুনাফার বিষয়ে অনেকটা শংকা রয়েছে বলে জানান চন্দন কর্মকার।

উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন রামচন্দ্রপুর বাজারের কয়েকজন কামার জানান, আগে পুরো বছরজুড়ে যে পরিমান দা-ছুরি বিক্রি করতে পারতাম, তখন শুধু কোরবানীর ঈদেই তার দ্বিগুনের চেয়ে বেশী বিক্রি করতাম। মুনাফাও হত বেশ ভালো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসা ভালো না। যার কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন লোহার দাম বৃদ্ধি, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন কোম্পানী এখন ছুরি চাপাতি বিক্রি করায় গ্রাহক সংখ্যাও আগের তুলনায় কমে গেছে।

কামার কারিগর নয়ন কর্মকারসহ বেশ কয়েকজন বলেন, এ পেশায় পরিশ্রমের চেয়ে মুনাফা অনেক কম। দিনরাত সারাক্ষণ আগুনের পাশে বসে কাজ করতে হয়। তারপরেও গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে দিনরাত একাকার করে কাজ করে চলেছি। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হলেও তাদের পৈত্রিক পেশাকে এখনো বুকে আঁকড়ে ধরে আছেন। কিন্তু তাদের সন্তানদের আর এ পেশায় আনবেন না। অনেকেই তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। তবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পকে টেকসই করে গড়ে তোলা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!