কীভাবে শেষ হবে করোনা মহামারী?

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে আজ বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। এই ভাইরাসের ধ্বংসযজ্ঞে যেন অসহায় হয়ে পড়েছে বিশ্ববাসী। প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ প্রযুক্তি সব মিলিয়ে আধুনিক যুগে অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও কয়েক মাস ধরে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে থমকে আছে বিশ্ব। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সব ক্ষেত্রেই এর প্রভাব পড়েছে শোচনীয়ভাবে। অর্থনীতির দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলো তো বটেই, বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোও এ মুহূর্তে করণীয় নিয়ে নিশ্চিত কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। কেউ জানে না, কবে নাগাদ শেষ হবে করোনার প্রকোপ।

কীভাবে মানুষ মুক্তি পাবে এই মহামারী থেকে। নিরন্তর গবেষণা চলছে। ইতিহাসবিদ, অর্থনীতিবিদ সবাই অতীত পর্যালোচনা করে বর্তমানে কীভাবে মুক্তির পথ পাওয়া যায়, সেই উপায় খুঁজছেন। ইতিহাসবিদদের মতে, মহামারী দুভাবে শেষ হতে পারে। এক. চিকিৎসাগতভাবে। চিকিৎসার মাধ্যমে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার ধীরে ধীরে কমলে। দুই. সামাজিকভাবে।

যখন মহামারী সম্পর্কে ভীতি কমে আসে। কিন্তু মানুষ কোনোভাবে মহামারীটির সমাপ্তি দেখতে চায়? এ নিয়ে আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন এবং ওষুধের ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষক ডক্টর জেরেমি গ্রিন বলেন, ‘মানুষ যখন জিজ্ঞেস করে কবে নাগাদ মহামারী শেষ হবে, তখন আসলে তারা সামাজিকভাবে সেটি শেষ হওয়ার কথা জানতে চায়।’ সহজ ভাষায়, একটা রোগ একদম নিশ্চিহ্ন হলে তবেই এর প্রকোপ বন্ধ হয় এমন নয়। বরং মানুষ একসময় এই ভীতিকর অবস্থার সঙ্গে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং রোগের সঙ্গে বেঁচে থাকতে শিখে যায়। ঠিক এমন কিছুই হতে যাচ্ছে কোভিড-১৯-এর বেলায়।

হার্ভার্ড ইতিহাসবিদ অ্যালান ব্রান্ড বলেন, ‘অর্থনীতি অনেক দিন ধরেই স্তিমিত হয়ে আছে। সব খাতেই এর গুরুতর প্রভাব পড়েছে। তবু যখন এই অর্থনীতির চাকা সচল করার কথা বলা হলে প্রচুর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মেডিকেল ও স্বাস্থ্য খাত থেকে মহামারী শেষ হয়ে গেছে এমন ঘোষণা আসার আগেই অর্থনীতিকে সচল করার চাপ বাড়ছে। সামাজিক উদ্বেগ বাড়ছে। রাজনৈতিকভাবেও চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তবু কিছু হয়তো করার নেই। অতীতেও এমন ঘটেছিল। ধীরে ধীরে সব নতুন করে শুরু হবে।’

ইতিহাসবিদদের মতে, চিকিৎসাগতভাবে এই রোগ শেষ হওয়ার আগে সামাজিকভাবেই শেষ হয়ে যাবে। ভ্যাকসিন অথবা কার্যকর ওষুধ আবিষ্কার হওয়ার আগেই মহামারী নিয়ে নানা বিধিনিষেধেই বিরক্ত হয়ে উঠবে মানুষ।

ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ নাওমি রজার্স বলেন, ‘আমার মনে হয় অবসাদ আর প্রতিবন্ধকতা থেকেই সামাজিকভাবে এই রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা শুরু হয়ে যাবে। আমরা হয়তো এ মুহূর্তে এমন অবস্থায় আছি, যেখানে সবাই এখন থেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চায়।’ কথাটি অবশ্য ভুল নয়। বেশ কিছু জায়গায় সরকারপ্রধানরা লকডাউন উঠিয়ে নিচ্ছেন, সেলুন, জিম, রেস্টুরেন্ট খুলে যাচ্ছে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতর এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছে না। অর্থনীতি যত ধসে পড়তে থাকবে, তত মানুষ বিরক্ত হয়ে কাজে ফিরতে চাইবে।

রজার্সের মতে, এখন এ বিষয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হবে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলবেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের চেষ্টায় এ রোগ থেকে মানুষ সেরে উঠছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ বলবে সামাজিকভাবেই বন্ধ হয়েছে। অতীতেও ঠিক কাউকে নির্দিষ্ট করে রোগ সারানোর কৃতিত্ব দেওয়া যায়নি। এবারও ঠিক এমনই হবে। কোভিড-১৯ নিয়ে এখনও জয় আসেনি। এটাই এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই মহামারী শেষ হতে আরও লম্বা এবং কঠিন সময় পাড়ি দিতে হবে।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
error: ধন্যবাদ!