জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :
গঠনতন্ত্রে দুই বছরের বাধ্যবাধকতা থাকলেও চার বছর পর সম্মেলন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এরই মধ্যে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। ৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্বস্ত সূত্র।
জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীদের সহিংসতা মোকাবিলায় রাজপথে শক্ত বলয় তৈরি করতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য আগে থেকেই ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজাতে ছক কষছে দলটির হাইকমান্ড। এরই অংশ হিসেবে চার বছরে ঝিমিয়েপড়া ছাত্রলীগকে উদ্দীপ্ত করতে নতুন নেতৃত্ব আনবে তারা। প্রথমে ঢাকা মহানগর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ ঢেলে সাজানো হবে। এরপর ওই নেতৃত্বের মাধ্যমেই সারাদেশে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দিয়ে সংগঠনকে উজ্জীবিত করা হবে।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে। ২৯তম ওই জাতীয় সম্মেলনের প্রায় দুই মাসের মাথায় ৩১ জুলাই কমিটি ঘোষণা করা হয়। তাতে সভাপতি হন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম রাব্বানী। দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের কারণে ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর পদচ্যুত হন শোভন-রাব্বানী। তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয় যথাক্রমে সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে। পরের বছর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তারা পূর্ণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনের চার বছর হতে চললেও জয়-লেখকের পূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার দুই বছর হবে আগামী ৪ জানুয়ারি। দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন সংগঠনটির সাংগঠনিক অভিভাবক ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান কমিটি সংগঠন গুছিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করতে ছয় মাস সময়ও পাবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় তার অনুসারীদেরও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা নিশ্চিত করেছেন।
ছয় মাস পর সম্মেলন হলে সেটি হবে ছাত্রলীগের আগের সম্মেলনের চার বছর পর। জয়-লেখকের পূর্ণ দায়িত্বগ্রহণের আড়াই বছর পর।
তবে দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যেও ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় শতখানেক ইউনিটের সম্মেলন করতে পারেনি। দিতে পারেনি কমিটিও। এমনকি সম্মেলন হয়ে যাওয়া ঢাকার চার ইউনিটেরও কমিটি দিতে পারেনি। দীর্ঘদিন প্রতীক্ষার অবসান করে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্মেলনের তারিখ দিয়ে সেটিও করতে ব্যর্থ হয়েছে ছাত্রলীগ। তবে সাংগঠনিক ব্যর্থতার মাঝেও করোনায় তাদের ‘মানবিক সহায়তা’ প্রশংসা কুড়িয়েছে। একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীও তাদের প্রশংসা করেছেন।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাতদিনেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। করোনায় কর্মহীন ও অসহায় মানুষের মাঝে ছাত্রলীগের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ এ নিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, সম্মেলনের জন্য আমরা প্রস্তুত। নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) চাইলে এক মাসের মধ্যে সব গুছিয়ে সম্মেলন করে দিতে পারবো।
সংগঠনটির সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক সময়ে যে রাজনৈতিক অবস্থা, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশা করছি, অচিরেই আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের আয়োজনের নির্দেশ দেবেন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুসংগঠিত হয়ে কাজ করা এবং বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা মোকাবিলার মতো সাংগঠনিকভাবে দক্ষ ও শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কমিটি তৃণমূল নেতাকর্মীদের উপহার দেবেন।
আরেক সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে কমিটির সুনির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। বর্তমান কমিটি অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। সে হিসেবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন দেওয়া খুবই জরুরি। এ ব্যাপারে আমরা নেত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছি। তিনি যখন ভালো মনে করবেন, তখনই সম্মেলনের তারিখ দেবেন। আমরা সুন্দরভাবে সেই সম্মেলন সফল করবো।