বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে শত শত মানুষের সামনে পিটিয়ে হত্যা!

নরসিংদী প্রতিনিধি : থেমে গেছে সব কোলাহল। স্তব্দ হয়ে গেছে পরিবারের সকল আনন্দ। মুহূর্তেই ঈদ আনন্দ রূপ নিয়েছে বিষাদে। বাড়িজুড়ে কান্না আর আহাজারি। শোকে বিহ্বল স্বজনরা। সন্তান হারিয়ে পাগল প্রায় মা-বাবা।

শোকে ছায়া নেমে এসেছে গ্রামজুড়ে। এই চিত্র মেঘনা নদীবেষ্টিত চরঞ্চল নরসিংদীর কালাই গোবিন্দপুর গ্রামে। দশম শ্রেণির স্কুলছাত্র অনিককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে শত শত মানুষের সামনে সহপাঠিরা পিটিয়ে হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায়জুড়ে ক্ষোভ ও মিস্ত্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার সন্ধা ৬টার দিকে সদর উপজেলার নাগরিয়াকান্দি এলাকায় ঈদ উপলক্ষে মেঘনা নদীতে নৌ ভ্রমণে গিয়ে অনিক মিয়া নামে এক স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার করে বন্ধুরা। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সদর উপজেলার নাগরিয়াকান্দি এলাকায় শেখ হাসিনা সেতুতে বেড়াতে যায় কালাইগোবিন্দপুর এলাকার শহিদুল্লাহ মিয়ার ছেলে ও সাটিরপাড়া কালিকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ফারহান আহমেদ ওরফে অনিক (১৫)।

ওই সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দড়ি নবীপুর গ্রামের আজিজুল, শ্রাবন, আরিফ ও মাইন উদ্দিনের সাথে ঝগড়া হয়। পরে আশপাশের লোকজন তাদের নিভৃত করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনার একদিন পর আজিজুল, শ্রাবন, আরিফ ও মাইন উদ্দিন, ইয়াসিন, সাগর বাদশাসহ বিভিন্ন লোকজন নৌকা যোগে পিকনিক করতে নাগরিয়াকান্দি এলাকায় শেখ হাসিনা সেতুতে আসে।

বিকাল ৪টার দিকে অনিকের বন্ধু আরিফ তাকে ফোন করে ব্রিজে আসতে বলে। এবং ঝগড়ার সমস্যা সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দেয়। এমন খবরের ভিত্তিতে অনিক সেখানে যায়। যাওয়ার পর পরই পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আরিফ ও তার বন্ধুরা মিলে অনিককে নৌকার কাঠ দিয়ে পিটাতে থাকে। এক পর্যায়ে তার মাথায় স্বজোরে আঘাত করে। পরে অনিককে পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ অনিকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা সাতজনের নাম উল্লেখ করে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার বিকালে বাদ আসর নামাজের জানাজা শেষে অনিকের মরদেহ দাফন করা হয়।

সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ নিহতের মা-বাবা ও স্বজনরা। অনিককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিহতের বাবা শহিদুল্লাহ মিয়া।

তিনি বলেন, আমার কাছে না বলে অনিক কোথাও বের হয় না। ঘটনার দিন বিকাল ৪টার দিকে আরিফ অনিকের মোবাইলে ফোন করে ব্রিজে যেতে বলে। পরে বাড়িতে একটা ছোট ছেলেকে পাঠায়। পরে অনিক সেখানে গেলে তারা তাকে কুকুরের মতো পিটিয়েছে। পরে তাকে পানিতে ফেলে দেয়।

ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা রোজিনা বেগম। থেমে থেমে বিলাপ করে কাঁদছেন। আর বলছেন, ‘আমার সখের ময়না ঘুমাইয়া রইছে। তোমার আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার করে দাও।’

নিহতের ভাই মাহিম হাসান বলেন, অনিক গোসল করছিল। ওই সময় আরিফ অনিকের মোবাইলে ফোন দেয়। এবং তাকে ব্রিজ এলাকায় যেতে বলে। অনিকের দেরি হচ্ছিল দেখে পর পর তিনবার ফোন দেয়।

এদিকে, আনন্দ ভ্রমণের সময় দুই নৌকার লোকজনের মারামারির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ইয়াসিন সরকার প্রকাশিত সেই ভিডিওতে দেখা যায় লাঠি, বাঁশ ও কাঠ নিয়ে মারামারি করছে। সে সময় নদীতে এক কিশোরের মাথায় সজোড়ে কাঠ দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায়।

সদর মডেল থানার (ওসি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দত্ত বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তারা এ ঘটনার সাক্ষী হতে পারে। তদন্তের স্বার্থে আটকদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানা অভিযোগ দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বিডি প্রতিদিন

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
error: ধন্যবাদ!