সাংবাদিকদের সনদ দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে, নাকি প্রেস কাউন্সিল নিজেই উদ্যোগে নিয়েছে?
বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ : দেখুন, সাংবাদিকদের সনদের আওতায় আনার দাবিটি সরকারের নয়, বরং প্রকৃত সাংবাদিকরাই এই দাবি তুলে ধরছেন। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর বিভিন্ন জেলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। সাংবাদিকরাই পরীক্ষার মাধ্যমে সনদ দেওয়ার দাবিটি আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন। শুধু মফস্বলেই নয়, খোদ রাজধানীতে আজ অপসাংবাদিকতার কারণে প্রকৃত সাংবাদিকরা চরম উদ্বিগ্ন। তাঁরা চান অপসাংবাদিকতা বন্ধে সনদের ব্যবস্থা করতে। তাই বিষয়টি নিয়ে প্রেস কাউন্সিল খুবই গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। সনদ ছাড়া ভবিষ্যতে কেউ সাংবাদিকতা করতে পারবেন না।
সনদের ব্যবস্থা স্বাধীন সাংবাদিকতায় কোনো বাধা সৃষ্টি করবে কি?
মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ : সনদের অর্থ এই নয় সাংবাদিকতায় বাধা সৃষ্টি করা। মূলত সাংবাদিকদের সমন্বিত করা, সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন ও পেশার সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতেই এই ব্যবস্থা। সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দলমত দেখা হবে না, পরীক্ষায় যাঁরা পাস করবেন তাঁরাই সাংবাদিকতা করবেন। আর পরীক্ষার সিলেবাস কী হবে, পরীক্ষার ধরন কী হবে, তা সাংবাদিক প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতেই করা হবে। প্রকৃত সাংবাদিকরা যখন কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত হবেন ও সনদ পাবেন, তখন ভুয়া বা অপসাংবাদিকরা সুবিধা করতে পারবে না। যেমন ধরুন, একজন ছাত্র মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করেই চিকিৎসা পেশায় প্রবেশ করতে পারে না, আইন বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করেই কেউ আইন পেশায় যেতে পারে না। ডাক্তার সনদ নেন বিএমডিসি থেকে এবং আইনজীবী বার কাউন্সিল থেকে সনদ ছাড়া আইন পেশায় প্রবেশ করতে পারেন না। তেমনই সাংবাদিকতা করতে হলে প্রেস কাউন্সিলের সনদ নেওয়াও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে পরীক্ষা পদ্ধতি, কাঠামো ও বিষয়বস্তু কী ধরনের হবে?
মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ : যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় পাস করে আসবেন তাঁদের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা নয়, শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে সনদ দেওয়া হবে। জাতীয় দৈনিকে কর্মরত সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক সাংবাদিকদের তালিকা প্রেস কাউন্সিলে পাঠালে সনদ ইস্যু করা হবে। তবে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। এসব এখন প্রাথমিকভাবে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। প্রেস কাউন্সিলের সব সদস্যের সঙ্গে আলোচনা ও গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতেই একটি কাঠামো তৈরি করা হবে, যাতে সেটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোনো বাধার সৃষ্টি না হয়।
সাংবাদিকদের সনদের আওতায় আনা হলে অপসাংবাদিকতা বন্ধ হবে কি?
মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ : এখন আমরা কী দেখছি, পঞ্চম শ্রেণি আর অষ্টম শ্রেণি পাস করে সাংবাদিকতায় আসছে। পানের দোকানদার, চায়ের দোকানিও এখন সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে। ফেসবুক চালায় সেও মোটরসাইকেলের সামনে প্রেস লাগিয়ে ঘুরছে। রাস্তায় বের হলেই সাংবাদিক লেখা গাড়ির ছড়াছড়ি। আসলে তাদের বেশির ভাগই সাংবাদিক নয়, ভুয়া সাংবাদিক। এই ভুয়া সাংবাদিকদের কারণে সাধারণ মানুষ যেমন জিম্মি, ঠিক তেমনি প্রকৃত সাংবাদিক ও তাঁদের মহান পেশাটির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমি যখন মফস্বলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিই, সেখানে অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, স্যার, সম্পাদকদের কতটুকু যোগ্যতা থাকতে হবে, তা নির্ধারিত না থাকায় যে কেউ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবাদিকতায় যাঁদের কোনো ধরনের যোগ্যতা নেই তারাই যখন সম্পাদক হচ্ছেন, তখন প্রকৃত সাংবাদিকদের সুনাম রক্ষার উপায় কী?
এই সাংবাদিকতা পেশার সুনাম যেন আর ক্ষুণ্ন না হয় সে জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ। সাংবাদিকরা যখন প্রেস কাউন্সিলের সনদধারী হবেন, সেই সাংবাদিকদের নাম, পদবি, প্রতিষ্ঠানসহ বিস্তারিত তথ্য কাউন্সিলের ওয়েবসাইটের তালিকায় দেওয়া থাকবে। এখন যদি কোনো অসাধু ব্যক্তি কোনো প্রকৃত সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ভুক্তভোগীরা মোবাইল ফোনে কিংবা কম্পিউটারে অনলাইনে প্রেস কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে গিয়ে যাচাই করে নিতে পারবে সে আসল সাংবাদিক, নাকি নকল সাংবাদিক। সনদধারী হলে ইচ্ছা করলেই কেউ সাংবাদিক পরিচয় দিতে পারবে না। পরিচয় দিতে হলে সনদ লাগবে, যা প্রেস কাউন্সিলে পরীক্ষার মাধ্যমেই নিতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দলীয় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ শোনা যায়। সাংবাদিকতার সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা থাকবে কি?
মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ : প্রেস কাউন্সিলে একজন সাংবাদিকের পরিচয় শুধু সাংবাদিক। এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত বলে কিছুই নেই। যে দলের সমর্থক হোন না কেন, পরীক্ষায় পাস করলে তিনি সনদ পাবেন। একজন প্রকৃত সাংবাদিক কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত হলে সম্মানিত বোধ করবেন। এখানে সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। অধিকার চ্যুত করার কোনো চিন্তাভাবনা নেই, কোনো দিন করাও হবে না। তবে অযোগ্য কিংবা ভুয়া কোনো সাংবাদিকের প্রেস কাউন্সিলের সনদ পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। এসব বিষয়ে কাউন্সিলের সদস্যদের মতামত নেওয়া হবে। আমি প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না, পারব না। কাউন্সিলের সদস্য সাংবাদিক, আইনজীবী, সংবাদপত্রের মালিকপক্ষের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, দুজন সংসদ সদস্যসহ আরো ১৪ জন সদস্য থাকবেন। তাঁদের সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সনদ দেওয়ার বিষয়টি কাউন্সিল অনেক দিন ধরেই চিন্তা করছে, আগে জোরালোভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই সরকার সাংবাদিকবান্ধব, সাংবাদিকদের কল্যাণে, সাংবাদিকদের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
কয়টি ক্যাটাগরিতে সাংবাদিকদের সনদ দেওয়া হবে?
মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ : রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা-উপজেলার সাংবাদিকদের বিভিন্ন ক্যাটাগরির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করা হবে, সনদের ব্যবস্থা করা হবে। মফস্বল পর্যায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত করা হবে। এসব পরীক্ষায় সাংবাদিকদের প্রতিনিধিও থাকবেন। পরীক্ষার জন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতায় একটি সিলেবাস তৈরি করা হবে। সেই সিলেবাসের ওপর তাঁদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। কেউ পরীক্ষায় ফেল করলে তিনি নিজেকে সাংবাদিক দাবি করতে পারবেন না। আর সিলেবাস গণমাধ্যমে অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের পরামর্শের ভিত্তিতেই তৈরি করা হবে।
তবে কিছু কিছু সাংবাদিক আছেন, যাঁরা স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন, সেসব সাংবাদিককে নিয়েও আমাদের চিন্তা আছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে এটা ত্রুটিমুক্তভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটা নিয়ে কাউন্সিল কাজ করছে। আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব, কী করলে ন্যূনতম একটা যোগ্যতা নির্ধারণ করা যায়।
প্রেস কাউন্সিল থেকে সনদ নেওয়ার পরীক্ষার ক্ষেত্রে মফস্বলে সাংবাদিকতা আর ঢাকার সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র কিংবা সিলেবাস ভিন্ন থাকবে কি?
মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ : মফস্বল এলাকায় যাঁরা সাংবাদিকতা করবেন তাঁদের পরীক্ষার সিলেবাস ও শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি এক ধরনের হবে, আর ঢাকায় যাঁরা সাংবাদিকতা করবেন তাঁদের পরীক্ষার প্রশ্ন, সিলেবাস ও শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ প্রতিটি বিষয়ে ভিন্নতা থাকবে। তাঁদের পরীক্ষাও নেওয়া হবে উপজেলা-জেলাভিত্তিক। জেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে একজন ডেপুটি কমিশনারকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করে দেওয়া হবে, সেই কমিটিতে সাংবাদিক প্রতিনিধিরাও থাকবেন। এ বিষয়গুলো প্রেস কাউন্সিলের সদস্যদের সবার মতামতের ভিত্তিতেই করা হবে। মাস্টার্স পাস করে কিংবা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে খুব কমসংখ্যকই উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকতা করে। ওসব এলাকায় যাঁরা প্রকৃত সাংবাদিক তাঁরাই যেন সাংবাদিকতা পেশায় থাকেন। কোনো ভুয়া ব্যক্তি কিংবা অপরাধী নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে যেন প্রতারণা করতে না পারে সে জন্যই পরীক্ষার মাধ্যমে সনদের ব্যবস্থা।
সনদ দেওয়ার উদ্যোগের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আপনার কোনো আলোচনা হয়েছে কি?
মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ : আমি এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়গুলো উপলব্ধি করেছি। মনে হয়েছে, সাংবাদিকদের একটি তালিকাভুক্তির প্রয়োজন রয়েছে। এমনকি মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকদের কাছ থেকে সনদ দেওয়ার দাবি ওঠে এবং আমি গণমাধ্যমে কিছু বিশিষ্ট সাংবাদিকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলি। সবাই অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধে একটি উদ্যোগ নিতে বলেন। আর প্রেস কাউন্সিলের ১৯৭৪ সালের আইনেও সাংবাদিকদের মান সংরক্ষণের বিষয়টি উল্লেখ আছে। বিষয়টি নিয়ে আমি তথ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে সাংবাদিকদের জন্য সনদ নেওয়ার কথা বলেছি, হয়রানি বন্ধে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্যানেল কোর্টে মানহানির মামলার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কেউ যদি মানহানির মামলা করতে চায়, তাহলে আদালতে নয়, প্রেস কাউন্সিলে করতে হবে। সাংবাদিকদের কল্যাণে আরো বেশ কিছু বিষয় আমি মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে তুলে ধরি। তিনি বিষয়গুলোকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নেন এবং আমাকে এ বিষয়ে সুপারিশ আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতেও বলেন। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা কি প্রেস কাউন্সিলে করতে হবে?
মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ : দেখুন, সারা দেশে বিভিন্ন মামলায় সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে, মামলার পেছনে তাঁদের অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। শুধু সাংবাদিক নন, যিনি মানহানির মামলা করছেন তাঁরও অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। আদালতে মামলা মানেই জামিন নেওয়ার প্রশ্ন আছে, আইনজীবী নেওয়ার প্রশ্ন আছে, হাজিরা দেওয়ার বিষয়টি আছে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আর এসব মামলায় হাজিরা আর জামিনসহ নানা বিষয়ে ছুটতে হচ্ছে। একজন সাংবাদিককে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে আদালতে ছোটাছুটি করে কাহিল হতে হচ্ছে। সময়মতো না যেতে পারলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হচ্ছে। এসব হয়রানি থেকে রক্ষা করতেই এমন একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছি, যেন শুধু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কেউ মানহানির মামলা করতে চাইলে প্রেস কাউন্সিলেই করতে পারে। দেখুন, মানহানির মামলাটি আদালতের একজন জুডিশিয়াল বিচারক বিচার করেন। কিন্তু কাউন্সিলে একজন বিচারপতি আছেন। সঙ্গে আছেন সাংবাদিকদের প্রতিনিধি ও সংবাদপত্রের মালিকদের প্রতিনিধি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিনিধি আছেন। সংসদের দুজন সদস্য আছেন। বাংলা একাডেমির প্রতিনিধিত্ব আছে। প্যানাল কোর্টে যেখানে দুই বছরের জেল দেওয়ার বিধান রয়েছে, সেখানে যদি তাঁদের বিচার করে দিই, পাঁচ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে দিই, তাহলে তা যথেষ্ট হয়। আমরা বলছি, এটাকে সহজীকরণ করার কথা, যেখানে প্যানাল কোর্টে একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট মানহানির মামলায় তাঁদের শাস্তি দেন, সেখানে কাউন্সিলে একজন আপিল বিভাগের বিচারপতির মাধ্যমে কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। সাংবাদিকদের মামলা প্রেস কাউন্সিলে আনা হলে সময় কম লাগবে, হয়রানি থেকে বাঁচবেন, সুবিচার পাবেন। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও কমে যাবে।
আপনি বলছেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে এসব করা হচ্ছে। তাহলে প্রেস কাউন্সিলে বাদী কি সুবিচার পাবেন?
মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ : এখানে অবশ্যই বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষই সুবিচার পাবে। আপনারা জানেন, এখানে জুডিশিয়াল কমিটি রয়েছে, জুডিশিয়াল কাউন্সিলে চেয়ারম্যানসহ ১৫ জনের কমিটি আছে। আদালতে যেমন দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে হয়, এখানেও উভয় পক্ষের শুনানি করার পর এই বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, এসব বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখুন, এটা করতে পারলে সাংবাদিকদের উপকার হবে। আমরা কাউন্সিলে দাখিল করার জন্য সুপারিশগুলো তৈরি করছি, কাউন্সিলের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ-আলোচানার মাধ্যমে চূড়ান্ত সুপারিশগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
কেউ কেউ বলে থাকেন, সতর্ক করা ছাড়া প্রেস কাউন্সিলের কোনো ক্ষমতা নেই, প্রেস কাউন্সিল একটি ঠুঁটো জগন্নাথ। বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?
মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ : বিগত সময়ে প্রেস কাউন্সিলের রায়ের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। আমরা দেখেছি, প্রেস কাউন্সিলের মামলার পর এখানের হুকুমও অনেকে মানতে চায় না। সুযোগ দেওয়ার পর অনেকেই অস্বীকার করতে চেষ্টা করে। এমনকি কাউন্সিলের বিরুদ্ধেও বিষোদ্গার করতে দ্বিধা করে না। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে কাউন্সিলের প্রতি অবমাননার বিষয়টিও আইনের আওতায় আনার চিন্তাভাবনা চলছে। প্রেস কাউন্সিলের রায়ই যদি না মানে, তাহলে এটার মূল্য কী? আমরা আইনের সংশোধনের জন্য কিছু সুপারিশ তৈরি করছি। অভিভাবক হিসেবে কাউন্সিলকে বেছে নেবেন সাংবাদিকরা। তাই কাউন্সিলকে আরো বেশি শক্তিশালী করতে হবে। বর্তমানে সারা দেশে প্রায় তিন হাজারের বেশি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা আছে। এখানে সাংবাদিকতার যেমন উৎকর্ষ সাধন হচ্ছে, তেমনি অবনতিও হচ্ছে। সাংবাদিকতার মূল উৎসই হচ্ছে গণতন্ত্র ও মানবিকতা রক্ষা করা। সে জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে সম্প্রতি একজন সাংবাদিক এসে আমাকে বললেন, স্যার, আমি একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী, সাংবাদিকতা পেশায় আছি দীর্ঘদিন ধরে। পত্রিকা থেকে পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে শ্রম আদালতে যেতে হয়। সাংবাদিকদের একজন শ্রমিক হিসেবে দেখা হয়। এখন আপনারাই বলুন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও একজন সাংবাদিক পরিচিতি পাচ্ছেন শ্রমিক হিসেবে। ভবিষ্যতে এসব বিষয় কিভাবে প্রেস কাউন্সিলের অধীনে আনা যায় সেটাও আমাদের ভেবে দেখতে হবে।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ : আপনাকেও ধন্যবাদ।
কালের কণ্ঠ