করোনা আতঙ্কে ডাক্তারশূন্য কুমিল্লা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

হাসপাতালের শহর কুমিল্লা করোনা আতঙ্কে ডাক্তারশূন্য হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়েছে ছোট ও মাঝারি আকারের হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। এতে চিকিৎসার অভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও মুমূর্ষু রোগীরা। কুমিল্লার জেলা-উপজেলায় ছোট-বড় পাঁচ শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। রোগীরা একাধিক হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসকদের দেখা পাচ্ছেন না। এদিকে চিকিৎসকদের বন্ধ চেম্বারের নোটিশ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।

গত ২৮ মার্চ কুমিল্লার বুড়িচং থেকে এক প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজনরা তাকে কুমিল্লায় নিয়ে আসেন চিকিৎসার জন্য। ওই প্রসূতি উপজেলার করিমাবাদ এলাকার মেজর আবদুর রউফের পুত্রবধূ। প্রথমে কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টার (টাওয়ার) হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার প্রসূতির স্বজনদের জানান, আলট্রাসনোগ্রাফি করানো ছাড়া তিনি কিছুই করতে পারবেন না। ডাক্তার না থাকায়                  আলট্রাসনোগ্রাফির নেই কোনো ব্যবস্থা। পরে গুরুতর অবস্থায় কুমিল্লা মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আলট্রাসনোগ্রাফি এবং ডাক্তার কোনোটাই পায়নি। নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, সেখানেও আল্ট্রাসনোগ্রাফির জন্য কোনো চিকিৎসাসেবা দিতে পারেনি ডাক্তার। শেষ পর্যন্ত ওই প্রসূতি চিকিৎসক এবং আল্ট্রাসনোগ্রাফির অভাবে মৃত্যুবরণ করে। প্রসূতির শ^শুর মেজর আবদুর রউফের দাবি, ওইদিন হাসপাতালে নেওয়ার পর ভালো ডাক্তার এবং চিকিৎসাসেবা পেলে তার ছেলের বউকে এভাবে চোখের সামনে হারাতে হতো না। সরেজমিন নগরীর কয়েকটি হাসপাতালে দেখা যায়, টমছম ব্রিজে ইউনাইটেড হাসপাতাল এবং এশিয়া ক্লিনিক নামে এ ধরনের ছোট ও মাঝারি আকারের চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো চিকিৎসকের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টার (টাওয়ার) বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডাক্তার এবং রোগীশূন্য। চার ভাগের তিন ভাগ চিকিৎসকের দরজা তালাবদ্ধ। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মো. আজিজুল হক, লিভাররোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবদুর রব সরকার, স্ত্রী ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন অধ্যাপক ডা. শামছুন নাহার, গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুন নাহার, শিশু-কিশোর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আবুল বাশার, অর্থো সার্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. সফিকুর রহমান পাটোয়ারী এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন অধ্যাপক্ষ ডা. মোহাম্মদ বেলাল ঘোষণা দিয়ে দরজায় বিজ্ঞপ্তি সাঁটিয়েছেন অনির্দিষ্টকালের জন্য তিনি রোগী দেখবেন না। বাকি অধিকাংশ চিকিৎসক ঘোষণা না দিয়েই করোনা আতঙ্কে রোগী দেখছেন না। কুমিল্লার মুন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় একই দৃশ্য। হাতেগোনা দুই-তিনজন চিকিৎসক ছাড়া অধিকাংশ ডাক্তারের দরজা তালাবদ্ধ। রোগী না দেখাদের মধ্যে রয়েছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শেখ মারুফুজ্জামান, ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. মো. সারোয়ার হোসেন খান (শুভ), নবজাতক, শিশু ও কিশোর বিশেষজ্ঞ ডা. মিয়া মনজুর আহমেদ, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নাজনীন আক্তার এবং ডা. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া ছাড়াও অনেক চিকিৎসক। এ ছাড়া একই অবস্থা কুমিল্লার ট্রমা সেন্টারে। ট্রমা সেন্টারের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. নীহার রঞ্জন মজুমদার ও ডা. মোহাম্মদ জহির উদ্দিনসহ বিভিন্ন রোগের অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দরজায় বিজ্ঞপ্তি ঝুলছে। এ ছাড়া রোগী না দেখার ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্য, মেডিসিন ও নিউরো মেডিসির বিশেষজ্ঞ ডা. পঞ্চানন দাশ, ডা. কার্তিক চন্দ্র সূত্রধর।

ডা. পঞ্চানন দাশ অবশ্য নোটিশে তার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেছেন। চেম্বার বন্ধ ঘোষণা করেছেন শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কে এ মান্নান, শিশু ও কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুল আলম এবং ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম।

কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টার (টাওয়ার) হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওমর ফারুক সুজন জানান, করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে চিকিৎসকরা স্বেচ্ছায় হাসপাতালে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। রোগী না দেখার যে নোটিশ সাঁটানো হয়েছে সেটার কারণ বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার জন্য।

কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান জানান, কুমিল্লার ডিসি, এসপি, বিএমএ, স্বাচিপ এবং চিকিৎসক নেতাদের মাধ্যমে ডাক্তারদের একাধিকবার অনুরোধ করা হয়েছে করোনার এ দুর্যোগে অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আহ্বান করা হয়েছে চেম্বারে ফিরে আসার জন্য।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
error: ধন্যবাদ!