বাবা দিবসে কুমিল্লায় অসুস্থ বাবাকে ডাস্টবিনে ফেলে গেল সন্তানরা, মৃত্যু হাসপাতলে

দেলোয়ার হোসেন জাকির :

বাবা দিবসে সবচেয়ে হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লায়। এক অসুস্থ পিতাকে ডাস্টবিনের ময়লা আবর্জনার মধ্যে ফেলে গেছে তার সন্তানরা। পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষনের মধে মারা যায় ওই বৃদ্ধা।

সারা বিশ্বে যখন পালন করা হচ্ছে বিশ্ববাবা দিবস, সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছেয়ে গেছে বাবাদের ছবি দিয়ে, সন্তানরা জন্মদাতা পিতার প্রতি অকুন্ঠ ভালোবাসা প্রকাশ করছে, এমন সময় এক অসহায় ষাটোর্ধ অসুস্থ পিতাকে ডাস্টবিনের ময়লা আবর্জনার মধ্যে ফেলে যাওয়ার ঘটনায় কুমিল্লাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। ধিক্কার দিচ্ছে ওই সন্তানদের যারা এমন নির্দয় অমানবিক কাজটি করেছে।

ডাস্টবিনের ময়লা আবর্জনার মধ্যে পড়ে থাকা ওই বৃদ্ধকে দেখে কেউ পুলিশের ৯৯৯ এ কল দেয়। পরে কুমিল্লা কোয়ালী থানা পুলিশ ডাস্টবিনের ময়লা আবর্জনা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষনের মধে মারা যায় খারশেদ মিয়া নামের ওই বৃদ্ধা। মারা যাওয়া আগে পুলিশের কাছে শুধু নিজের নামটাই বলতে পেরেছেন, সাথে বলেছেন অসুস্থ হলে তার নিজের সন্তানরা তাকে এখানে ফেলে চলে যায়। অন্য পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে ডাস্টবিনের ময়লায় পড়ে ছিলেন তিনি।

কুমিল্লা কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক জানান, শনিবার রাত সাড়ে আট’টায় জরুরী জাতীয় সেবা নাম্বার থেকে ফোন আসে কুমিল্লা বাদুড়তলা ফয়জুন্নেচ্ছা স্কুলের বিপরীতে ডাস্টবিনের ময়লায় এক বৃদ্ধ মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন।

রাত সাড়ে ৮ টায় ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর খন্দকার শাহাব উদ্দিন ও এসআই শাওন দাস, গিয়ে দেখতে পান ফয়জুন্নেচ্ছা স্কুলের বিপরীতে একটি ডাস্টবিনের পাশে পরে আছেন এক বৃদ্ধা, আমরা তার কাছে গেলে আমাদের দেখেই বৃদ্ধা খারশেদ মিয়া নড়ে উঠেন। ঘটনাস্থলে যাওয়া দুই এসআই জানায় আমাদের দেখে বললেন বাবারা আমাকে বাঁচাও, আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। লোকটির শ্বাস কষ্ট হচ্ছিলো। খুবই অসুস্থ ঠিক মতো কথা বলতে পারছিলেন না। এ কথা শোনার পর আমরা করোনায় আক্রান্ত হবো সে চিন্তা না করে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে অসুস্থ বৃদ্ধা খোরশেদ মিয়াকে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই।

পথে খোরশেদ মিয়াকে বললাম চাচা আপনি ডাস্টবিনের পাশে কেন, অস্পষ্ট মুখে বললেন উনার সন্তানরা ডাস্টবিনের পাশে ফেলে গেছেন। এর বেশী কিছু বলতে পারেননি খোরশেদ মিয়া। তাই ঠিকানাটাও ঠিকমতো নিতে পারিনি। আমরা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে পৌছাই। অসুস্থ খোরশেদ মিয়াকে ভর্তি করি। উনার ভর্তি যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করি। ঠিকানার জায়গায় আমার নাম ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে আসি। হাসপাতালের ডাক্তাররা দ্রুত চিকিৎসা দিচ্ছিল তাকে, কিছুক্ষন পরে হাসপাতাল থেকে আবারও ডিউটির উদ্দেশ্য রওনা হই। আমাদের গাড়ীটি হাসপাতাল থেকে ৩ কিলোমিটার দুরে আসার পর হাসপাতাল থেকে একজন নার্স ফোন করে বৃদ্ধ খোরশেদ মিয়া মারা গেছেন। বাবা দিবসে নিজ সন্তানদের কাছ থেকে সর্বেচ্চ উপহারটিই পেলেন অসহায় এই পিতা।

হয়তো খবর পেয়েছে তার সন্তানরা, ভয়ে পিতার মৃত দেহটি পর্যন্ত নিতে আসেনি। সারারাত লাশটি মেডিকেল হাসপাতালেই পরে ছিল। কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ারুল হক জানান, খোরশেদ মিয়ার সঠিক ঠিকানা খুঁজে পাইনি, এখনো তার কোন আত্মিয় স্বজন আসেনি। তাই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে লাশটি দাফনের জন্য তুলে দেওয়া হবে।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
error: ধন্যবাদ!