নিজস্ব প্রতিবেদক :
কুমিল্লা নগরকে আধুনিকায়ন ও নতুনরুপে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নিলেও কোনভাবেই মিলছে না যানজট নিরশন, ফলে দিন দিন হুমকির মুখে পরছে নগরে বসবাসকারী সহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা সাধারণ মানুষ। যানজটের কবলে পড়ে রোগী নিয়ে আসা এ্যাম্বুলেন্স, আদালতে আসা মানুষ ও বিভিন্ন অফিসে যাওয়ার সময় নস্ট হচ্ছে এই যানজটে আটকে পড়া মানুষদের।
কুমিল্লা বিআরটিএ তথ্যমতে, কুমিল্লা জেলা জুড়ে সিএনজি অটোরিক্সা অনুমোদন দিয়েছে প্রায় ৯ হাজার। এসব সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল করতে গিয়ে প্রতিটি সিএনজি সরকারকে প্রতি বছর জমা দেয়া হচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার টাকার মত। যার কারনে উপকৃত হচ্ছে সরকার, আদায় হচ্ছে রাজস্ব।
অপরদিকে কুমিল্লা নগরী ও আশপাশের এলাকায় অবৈধ ভাবে চলাচল করছে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, বর্তমানে কুমিল্লা নগরীর প্রায় ১৬ টি স্থানে অবৈধ স্ট্যান্ড ও যত্রতত্রে পার্কিং করে পরিচালনা হচ্ছে হাজারো ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, নিয়ন্ত্রন না থাকায় দিনদিন বিভিন্ন শো-রুম থেকে আরো বাড়তি ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা যোগ হচ্ছে। এসব ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা থেকে সরকার পাচ্ছে না কোন রাজস্ব, প্রতিদিন হাজার হাজার এই অটোরিক্সা এক সাথে চার্জ দেয়ায় রাত দিন ঘাটতি দেখা দিচ্ছে বিদ্যুৎতের, লোডশেডিং হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ থেকে মেডিকেল রোড, মসজিদের সামনে থেকে কান্দিরপাড়, ফল দোকানের সামনে থেকে চকবাজার ও কোটবাড়ী রোডে, অপর দিকে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড মুখী স্ট্যান্ড, কান্দিরপাড় পুবালী চত্ত্বর থেকে রানীর বাজার রোড, সিটি রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে শাসনগাছা, নিউ মার্কেটের সামনে থেকে জিলা স্কুল রোড, লিবার্টি মোড় থেকে রাজগঞ্জ ও ভিক্টোরিয়া কলেজ রোড, রাজগঞ্জ ট্রাফিক মোড়, কোতয়ালী থানা গেইট ও চকবাজার কাশারীপট্টি মোড়, চকবাজার আলীয়া মাদ্রাসা গেইটসহ প্রায় ১৬টির অধিক স্পটে অটেরিক্সা স্ট্যান্ড করে যাত্রী উঠা নামা করা হচ্ছে। এই সংগঠনের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে প্রায় ৬ টির অধিক সিন্ডিকেট, যারা বিভিন্ন নামে বে নামে ১০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। যার ফলে পর্দার আড়ালে থেকে প্রতিদিন আদায় হচ্ছে ৫ লক্ষ টাকার অধিক। এসব আদায়কৃত চাঁদা যাচ্ছে অজ্ঞাত সিন্ডিকেটদের পকেটে।
কুমিল্লা সিটিকর্পোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগকে নিয়ে কুমিল্লায় যানজট নিরশনে নির্দিষ্ট এলাকায় অটো চলাচল করার লক্ষ্যে একটি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের প্রাথমিক কার্যক্রম দেখা গেলেও এখন আর তা দেখা যাচ্ছে না, ফলে দাবিড়ে বেড়াচ্ছেন এই অবৈধ হাজার হাজার ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা।
অপর দিকে বিভিন্ন প্রিন্ট ও অন লাইন মিডিয়া সিএনজিকে নিয়ে যানজট মূল কারন ও ভাড়া আদায় করছে বলে সংবাদ প্রকাশ করে, সিএনজির লাইসেন্স দিয়ে অনুমতি দেয়ার ফলে ও রাজস্ব জমা দিয়ে গাড়ী চালানো হলেও তাদের কোন নির্ধারিত স্ট্যান্ড দেয়া হয়নি। যার কারনে সিএনজি ঘুরে ঘুরে যাত্রী উঠানামা করছে। তবে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সার কারনে যানজট সৃষ্টি হলেও দোষারোপ করা হচ্ছে বৈধভাবে কাগজপত্র নিয়ে চলা সিএনজিকে। তবে ব্যাটারী চালিত ইজিবাইকের কারনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সিএনজি, সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
এ বিষয় কুমিল্লা জেলা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি: ১৫৬৯) এর সভাপতি হাজী আবদুল কাদের জানান, কুমিল্লা নগরীতে ৩টি সংগঠন মিলে শ্রমিকদের কল্যাণে ৩০ টাকা করে আদায় করা হয়। বাংলাদেশ হালকা যান ফেডারেশন- রেজি: বি-২১৮১, মালিক সমিতি রেজি: ১৮৭৬ ও শ্রমিক ইউনিয়ন মিলে মোট ৩টি সংগঠন পরিচালনা করে থাকেন। শ্রমিকদের মৃত্যু. পেনশন, চিকিৎসা ভাতা, অনুদান ও সংগঠন পরিচালনার কাজে এই আয় ব্যয় করা হয়। ভাড়া বলতে কিছুই নেই, শুধু মাত্র কল্যাণের ফান্ডে কার্ডধারী সদস্য থেকে এই কল্যাণ আদায় করা হয়।
তিনি আরো জানান, সরকারকে প্রতি বছর রাজস্ব দিয়ে থাকে সিএনজি, কিন্ত ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সার নেই কোন লাইসেন্স, সরকার পাচ্ছে না কোন রাজস্ব, তৈরী হচ্ছে শহরের বিভিন্ন এলাকায় যানজট। বিদ্যুৎ অপচয়ের কারণে লোড শেডিংয়ের ভোগান্তিতে শহরের বাসিন্দারা। দিন দিন যোগ হচ্ছে শত শত অটোরিক্সা, যানজটের মূলেই রয়েছে নগরীর অনিয়নন্ত্রিত হাজার হাজার ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা।
এ বিষয় কুমিল্লা ট্রাফিক বিভাগের প্রধান (টিআই) মোঃ কামাল জানান, ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, ইজি বাইক, মোটর চালিত রিক্সাকে নির্দিষ্ট এলাকায় চলাচলের জন্য নির্দেশনা রয়েছে। এই অবৈধ গাড়ী গুলো কি নগরীতে চলবে কি চলবে না, তা সিদ্ধান্ত নিবেন নীতি নির্ধারকরা।
কুমিল্লায় কোন ধরণে টাউন সার্ভিস না থাকায় এই অবৈধ ইজি বাইক, ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা কি ভাবে কুমিল্লা নগরীতে চলাচল করছে, তা আদৌ আমার জানা নেই।