আকতার হোসেন (রবিন) :
সাড়া দেশ যখন করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বিপর্যস্থ কর্মহীন হয়ে পরা মানুষের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত ত্রাণ ও সহায়তা চুরি করে অনেক মেম্বার, চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিরা রাতারাতি দেশব্যাপী কুখ্যাত হয়ে পড়লেও দেবিদ্বার উপজেলার দুই চেয়ারম্যান এখন ব্যাপক আলোচিত হচ্ছেনমানুষ পিটিয়ে।
উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সরকার এবং গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম খাঁন করোনা বিপর্যয় রোধে চলমান লকডাউনের সময় রীতিমত শালিশ ডেকে লোক সমাগম ঘটিয়ে এই মারধরের ঘটনা ঘটান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
প্রথম ঘটনায় পারিবারিক কলহের কারণে আমেনা আক্তার নামে এক গৃহবধূ গত ৯ এপ্রিল সকালে তার স্বামীর বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সরকারের নিকট মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। দুপুরের দিকে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ আবদুল মতিন মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আজিজুর রহমানকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যান। তিনি চেয়ারম্যানের বাড়িতে যাওয়ার সময় তার মেয়ে দাখিল শ্রেণির ছাত্রী আরিফাতুন নুর এবং চাচাতো ভাই আবদুস ছামাদকে সাথে নিয়ে যান। চেযারম্যানের বাড়িতে যাওয়ার পর তার কোন বক্তব্য না শুনেই চেয়ারম্যান লাঠি ও রড দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। সেখানে উপস্থিত তার মেয়ে চিৎকার করে কাদঁতে কাঁদতে পিতাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যায়, কিন্তু তাকে রক্ষা করতে পারেনি। ইউপি সদস্য নুরুল ইসলামসহ অন্যান্য লোকজনও চেয়ারম্যানকে নির্বৃত্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পর দিন আহত ওই শিক্ষককে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
অপর একটি ঘটনায় করোনা পরিস্থিতির কারণে এলাকার কর্মহীন ও দরিদ্র লোকদের একটি তালিকা তৈরি করে তাদের ত্রাণ দেওয়ার জন্য আবেদন করেন গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের মাশিকাড়াগ্রামের আশেকে এলাহী। তাকে গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে বাড়ি থেকে তুলে এনে প্রায় ৪ঘন্টা পরিষদ ভবনে আটকে রেখে মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন ১০ নং গুণাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম খাঁন। গত ১১ এপ্রিল দুপুরে ঘটা এ ঘটনার একটি ভিডিওসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক ভিডিও নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়েছে।
ঘটনা দুইটি বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়লে জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। স্থানীয় প্রশাসনেও তৎপরতা দেখা যায়। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়ে চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম খাঁনের ব্যাপারে তদন্তের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু তাহেরকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম করেন দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান। বিষয়টি এখন উক্ত কমিটির তদন্তধীন আছে।
চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সরকারের বিরুদ্ধে গত ১৬ এপ্রিল ঘটনার এক সপ্তাহ পর দেবিদ্বার থানায় হত্যা চেষ্টা অভিযোগে মামলা করেছেন মাওলানা আজিজুর রহমান। চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান দেবিদ্বার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল আনোয়ার।