০৬:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
লালমাইয়ে বিয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে মারধর ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা কুমিল্লা সদর দক্ষিণের ব্যবসায়ী দুলালকেখুন্তি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা ভাড়াটিয়া সুমি কুমিল্লার বেলতলীতে পিকআপ চাপায় পথচারী নিহত বিতর্কের মুখে সংসদের নির্বাচনী এলাকা সীমানা নির্ধারণ কারিগরি কমিটি কুমিল্লা সদর দক্ষিণে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান অপরাধী যে দলেরই হোক, কোনো ছাড় নেই- ওসি মোহাম্মদ সেলিম কুমিল্লা সদর দক্ষিণে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইয়ংস্টার সোশ্যাল অর্গানাইজেশন এর সদর দক্ষিন উপজেলার কমিটি গঠন নতুন পুরাতন বুঝি না,ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে-ডা. শফিকুর রহমান ছয় দফা দাবিতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

কুমিল্লায় আমনের হাসিতে ভাসছে ফসলের মাঠ

  • তারিখ : ১০:৫১:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০
  • / 560

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস কুমিল্লাকে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত জেলায় পরিণত করলেও দমিয়ে রাখতে পারেনি এখানকার লড়াকু কৃষকসমাজকে। ঘাতক ভাইরাসের সমস্ত চোখরাঙানি উপেক্ষা করে কৃষকেরা দিনরাত শ্রম দিয়েছেন ফসলের ক্ষেতে। তাদের শক্ত হাতের যতেœ পুষ্ট হয়ে উঠেছে অন্যসব ফসলের মতোই রোপা আমনের ক্ষেতও। দিগন্তজোড়া সবুজ ধানক্ষেত দিনে দিনে হয়ে উঠছে সোনার বরণ। বাতাসে দুলে দুলে সোনালি ধানের শীষ যেন বলছে ‘আমরা শুধু ফসলই নই; আমরা কৃষকের বোনা সোনালি স্বপ্ন। আমরা আসলে লাখো কৃষকের মুখের হাসি।’ কুমিল্লার হাজারও কৃষক পরিবারের চোখেমুখে আজ তাই স্বপ্ন পূরণের হাতছানি। কারণ, কৃষি বিভাগের হিসাবমতে আর কোনো দুর্যোগ-বিপর্যয় না ঘটলে কমিল্লায় এবার রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে হবে সুপার বাম্পার ফলন।

কুমিল্লা জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, চান্দিনা, দেবিদ্বার, বরুড়া, ব্রাহ্মণপাড়া, চৌদ্দগ্রাম, লালমাই ও বুড়িচংসহ গোটা জেলায় এক লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমিনে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। উপরন্তু গত মৌসুমের তুলনায় এবার ১০ হাজার বেশি হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টনেরও বেশি ধান উৎপাদনের। চলতি বছরে রোপা আমনের বীজতলা তৈরি এবং ধান রোপনের সময় অতিবৃষ্টি হয়েছিল। কয়েক দিন আগেও সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ দ্রুত নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় অতিবৃষ্টি হয়েছে। তবে এতে কৃষকের মাঠে থাকা ফসলের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আশা করা হচ্ছে, কার্তিকের শেষে বা অগ্রহায়নের শুরু থেকে কৃষক আমন ধান কাটা আরম্ভ করবেন। এর মধ্যে যদি বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপর্যয় না ঘটে, তাহলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনেক ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষি দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে।

কুমিল্লার লালমাইয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন জানান, এই বছর লালমাইয়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছে। বর্তমান আবহাওয়ায় মাঠে কৃষকের ধান ভালো হয়েছে। এই উপজেলায় প্রায় ২৬ হাজার মেট্রিক টন ধানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও আবহাওয়া ঠিক থাকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। আরও কয়েকজন উপ-সহকারী মাঠ কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লার কৃষক এখন তাদের মাঠের ধান কাটার অপেক্ষায় রয়েছেন। কৃষক পরিবারসহ ব্যবসায়ীরাও আছেন খুশিতে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ধানক্ষেতের মধ্যে পোতা বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডালের ওপর ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ নানা প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধানগাছের ক্ষতিকারক পোকামাকড় ধওে খেয়ে ফেলছে পাখিরা। অনেক কৃষক পরিবার-পরিজন নিয়ে ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন। সবাই অধীর অপেক্ষায়Ñ কখন নতুন ধান ঘরে তুলবেন। গ্রামে গ্রামে এখন নতুন ধানের মৌতাত। বাড়ি বাড়ি চলছে নবান্ন উৎসবের
প্রস্তুতি।

কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুবজিৎ চন্দ্র দত্ত বলেন, ‘চলমান করোনা আতঙ্কেও মাঝেই আমরা আমনের উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাম্পার ফলনের লক্ষ্য নিয়ে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে আসছি। কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারেন এবং কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়েন, এজন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। আশা করি, বিগত মৌসুমের মতো এবারও কুমিল্লায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে।’

তিনি আরও জানান, গত মৌসুমের তুলনায় এই মৌসুমে কুমিল্লায় প্রায় ১০ হাজার বেশি হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। করোনায় সব কিছু থমকে দাঁড়ালেও সচল ছিল কৃষি। আমনের এবারের আবাদ থেকে কুমিল্লার কৃষকরা ৩ লাখ ১৫ হাজারেরও বেশি মেট্রিক টন ধান ঘরে
তুলবেন বলে আশা করছি।

সূত্র :
কুমিল্লার কাগজ

শেয়ার করুন

কুমিল্লায় আমনের হাসিতে ভাসছে ফসলের মাঠ

তারিখ : ১০:৫১:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস কুমিল্লাকে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত জেলায় পরিণত করলেও দমিয়ে রাখতে পারেনি এখানকার লড়াকু কৃষকসমাজকে। ঘাতক ভাইরাসের সমস্ত চোখরাঙানি উপেক্ষা করে কৃষকেরা দিনরাত শ্রম দিয়েছেন ফসলের ক্ষেতে। তাদের শক্ত হাতের যতেœ পুষ্ট হয়ে উঠেছে অন্যসব ফসলের মতোই রোপা আমনের ক্ষেতও। দিগন্তজোড়া সবুজ ধানক্ষেত দিনে দিনে হয়ে উঠছে সোনার বরণ। বাতাসে দুলে দুলে সোনালি ধানের শীষ যেন বলছে ‘আমরা শুধু ফসলই নই; আমরা কৃষকের বোনা সোনালি স্বপ্ন। আমরা আসলে লাখো কৃষকের মুখের হাসি।’ কুমিল্লার হাজারও কৃষক পরিবারের চোখেমুখে আজ তাই স্বপ্ন পূরণের হাতছানি। কারণ, কৃষি বিভাগের হিসাবমতে আর কোনো দুর্যোগ-বিপর্যয় না ঘটলে কমিল্লায় এবার রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে হবে সুপার বাম্পার ফলন।

কুমিল্লা জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, চান্দিনা, দেবিদ্বার, বরুড়া, ব্রাহ্মণপাড়া, চৌদ্দগ্রাম, লালমাই ও বুড়িচংসহ গোটা জেলায় এক লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমিনে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। উপরন্তু গত মৌসুমের তুলনায় এবার ১০ হাজার বেশি হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টনেরও বেশি ধান উৎপাদনের। চলতি বছরে রোপা আমনের বীজতলা তৈরি এবং ধান রোপনের সময় অতিবৃষ্টি হয়েছিল। কয়েক দিন আগেও সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ দ্রুত নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় অতিবৃষ্টি হয়েছে। তবে এতে কৃষকের মাঠে থাকা ফসলের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আশা করা হচ্ছে, কার্তিকের শেষে বা অগ্রহায়নের শুরু থেকে কৃষক আমন ধান কাটা আরম্ভ করবেন। এর মধ্যে যদি বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপর্যয় না ঘটে, তাহলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনেক ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষি দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে।

কুমিল্লার লালমাইয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন জানান, এই বছর লালমাইয়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছে। বর্তমান আবহাওয়ায় মাঠে কৃষকের ধান ভালো হয়েছে। এই উপজেলায় প্রায় ২৬ হাজার মেট্রিক টন ধানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও আবহাওয়া ঠিক থাকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। আরও কয়েকজন উপ-সহকারী মাঠ কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লার কৃষক এখন তাদের মাঠের ধান কাটার অপেক্ষায় রয়েছেন। কৃষক পরিবারসহ ব্যবসায়ীরাও আছেন খুশিতে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ধানক্ষেতের মধ্যে পোতা বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডালের ওপর ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ নানা প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধানগাছের ক্ষতিকারক পোকামাকড় ধওে খেয়ে ফেলছে পাখিরা। অনেক কৃষক পরিবার-পরিজন নিয়ে ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন। সবাই অধীর অপেক্ষায়Ñ কখন নতুন ধান ঘরে তুলবেন। গ্রামে গ্রামে এখন নতুন ধানের মৌতাত। বাড়ি বাড়ি চলছে নবান্ন উৎসবের
প্রস্তুতি।

কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুবজিৎ চন্দ্র দত্ত বলেন, ‘চলমান করোনা আতঙ্কেও মাঝেই আমরা আমনের উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাম্পার ফলনের লক্ষ্য নিয়ে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে আসছি। কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারেন এবং কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়েন, এজন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। আশা করি, বিগত মৌসুমের মতো এবারও কুমিল্লায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে।’

তিনি আরও জানান, গত মৌসুমের তুলনায় এই মৌসুমে কুমিল্লায় প্রায় ১০ হাজার বেশি হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। করোনায় সব কিছু থমকে দাঁড়ালেও সচল ছিল কৃষি। আমনের এবারের আবাদ থেকে কুমিল্লার কৃষকরা ৩ লাখ ১৫ হাজারেরও বেশি মেট্রিক টন ধান ঘরে
তুলবেন বলে আশা করছি।

সূত্র :
কুমিল্লার কাগজ