বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে বানভাসিরা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। শনিবার ব্রহ্মপুত্র নদ এবং ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে তলিয়ে যাচ্ছে নতুন এলাকা। এতে বানভাসি এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও জ্বালানির তীব্র সংকট।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, তিন দিন ধরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ৯ উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫০টি গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৬০টি বাড়ি।

রৌমারী, উলিপুর ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির বেশি অবনতি ঘটছে। শুরু হয়েছে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ। বন্যায় জেলায় প্রায় ৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ফসলাদি নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় তিন হাজার হেক্টর। নদীভাঙন ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বানভাসি মানুষ রয়েছেন দুর্ভোগে। তীব্র পানির স্রোতে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুড়িয়ারহাট এলাকায় অস্থায়ী বেড়িবাঁধের প্রায় ২৫ ফুট ভেঙে মেইনল্যান্ডের ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

বানভাসিদের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে রৌমারীতে ছয় হাজার এবং সদর উপজেলায় প্রায় ৫০০ প্যাকট শুকনা খাবার দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ায় সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব মাঠ পর্যায় নিরূপণের কাজ চলছে।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, তার ইউনিয়নে ১ হাজার ২০০ বাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় প্রায় ছয় হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। গত পাঁচ দিনে নদীভাঙন এবং পানির তোড়ে আরাজিপাড়া, রলাকাটা ও চরযাত্রাপুরের ৬০টি পরিবার বাড়িঘর হারিয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেদুল হাসান বলেন, ‘আমরা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করছি। এরই মধ্যে উদ্ধার কার্যক্রম এবং শুকনা খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রয়েছে।’ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম যাত্রাপুর ইউনিয়নের পাড়ারচর, রলাকাটা এলাকার বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, চলতি বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা বেড়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম বলেন, ‘জেলায় মাধ্যমিক স্কুল, কলেজে ও মাদ্রাসা পর্যায় ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে আর একটি প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় রৌমারীতে ৪৪টি এবং কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ১১টিসহ ৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।’

সিভিল সার্জন মনজুর-এ মুর্শেদ জানান, বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলা রৌমারী, রাজীবপুর, চিলমারী, উলিপুর ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। বন্যাদুর্গতদর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ৮৫টি মেডিক্যাল দল কাজ করছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বন্যায় মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় ৯ উপজেলায় ২৯৫ টন চাল, নগদ ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, শুকনা খাবার এক হাজার প্যাকেট, শিশুখাদ্য ক্রয় বাবদ ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং গো-খাদ্য কেনা বাবদ ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করে বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

‘বর্তমান মজুত আছে ৮ লাখ টাকা এবং ৩০৮ টন চাল। নতুন করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৫০০ টন চাল, ১০ লাখ টাকা এবং ১০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার।’

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
error: ধন্যবাদ!